বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি-অনিয়ম

আব্দুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি-অনিয়ম

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধেছে অনিয়ম-দুর্নীতি। এসব বিষয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা কোনো অভিযোগ তুললেই তাদের ওপর নেমে আসে নানামুখী অত্যাচার ও হুমকি-ধমকি। এই বাস্তবতায় এ হাসপাতালে রোগীরা জিম্মি দশায় চলছেন।

খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, ডাক্তাররা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাসপাতালে সময় দেন। বাকি সময় তারা বাইরে প্রাকটিস করেন। এ কারণে রোগীরা তাদের কাছ থেকে সঠিক সেবা পান না। ডাক্তার না থাকার সময় নার্স ও কয়েকজন ইন্টার্নি ডাক্তার হর্তাকর্তা হিসেবে ভূমিকা রাখেন। এ সুযোগে একশ্রেণির দালাল দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের কৌশলে নিয়ে যান নিজেদের প্যাথলজি সেন্টারে। আবার কখনো কখনো ডাক্তার ও নার্সরাও এ কাজ করেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রোগীদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে করা হয় না। রোগীরা সিন্ডিকেটের কাছ থেকে রক্ত কিনতে বাধ্য হন। জানা যায়, বেশিরভাগ রোগীর বেলায় রক্ত ব্যবহার না হলেও তা চোরাইপথে নিয়ে যাওয়া হয় প্যাথলজি সেন্টারগুলোতে। হাসপাতালের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ব্যবসায়  জড়িত। অপারেশন থিয়েটারকে ঘিরে চলছে আরেক বাণিজ্য। একজন রোগীর যতটুকু সার্জারি সরঞ্জামাদি প্রয়োজন তার দ্বিগুণ সরঞ্জামাদি লিখে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে লোটা হচ্ছে ফায়দা। কখনো কখনো দালালদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে রোগীর স্বজনরা এক হাজার টাকার সরঞ্জাম ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায়ও ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাইরে থেকে ওষুধ আনার জন্য শতাধিক দালালের সমন্বয়ে রয়েছে সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসপাতালের ভিতর কতিপয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যের সহায়তায় দেদার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আরও জানা যায়, ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদরহাসপাতালে ব্রাদার্সরা বেড নিয়ে রমরমা বাণিজ্য করছেন। এ ক্ষেত্রে ভর্তি হতে আসা রোগীদের কাছে প্রথমেই বেড সংকটের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আদায়ের পর বেড দেওয়া হয়। এ ছাড়া জরুরি রোগীদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রলি মেলে না প্রায়ই। এ ক্ষেত্রেও রয়েছে বাণিজ্য। মোটা অঙ্কের টাকা দিলেই ট্রলি মেলে। আর না দিলে স্বজনদের কাঁধে ভর দিয়ে রোগীদের চলতে হয়। হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড, সার্জারি ওয়ার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোয় ডাক্তারদের বিরুদ্ধে সীমাহীন অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থ রোগীরা থাকলেও ডাক্তারদের সময়মতো পাওয়া যায় না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে রোগী মারা যাচ্ছেন। এসব বিষয়ে অনেক অভিযোগ তোলা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। অভিযোগ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, দালালদের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবগত। তবে অভিযোগ দাখিল করলেই কেবল আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। ডাক্তার ও নার্সদের সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে আধুনিক সদর হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে। এত রোগীর সেবা দিতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও সাধ্যমতো সেবা দান করা হচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর