বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঋণ গ্রহীতা পাচ্ছে না ব্যাংক

মানিক মুনতাসির ও আলী রিয়াজ

ঋণ গ্রহীতা পাচ্ছে না ব্যাংক

আস্থাহীনতা আর অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ব্যাংকের কাছে বিনিয়োগযোগ্য প্রচুর পরিমাণ তারল্য থাকলেও ঋণ দিতে পারছে না। ঋণ নেওয়ারই কোনো লোক পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। দীর্ঘদিন থেকে চলা গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট আর অবকাঠামো সমস্যার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশি-বিদেশি সব উদ্যোক্তাই শঙ্কিত। কোনো উদ্যোক্তাই নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। ঋণের জন্য ব্যাংকে কোনো উদ্যোক্তা আবেদনই করছেন না। শুধু তাই নয় ব্যাংকগুলোতে সব ধরনের ঋণের আদায়ও কমেছে। ফলে ব্যাংকে বাড়ছে ঋণ খেলাপির পরিমাণ। আস্থাহীনতা, অনিশ্চয়তার সঙ্গে ব্যবসায়িক লোকসানকেও দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঋণের প্রবৃদ্ধি না বাড়ায় ব্যাংকগুলোতে জমছে অলস টাকার পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন হিসাব অনুযায়ী অক্টোবর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে অলস টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তবে পুরনো হিসাব অনুযায়ী (প্রকৃতপক্ষে) ব্যাংক খাতে বর্তমানে অলস টাকার পাহাড় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকার মতো। গতবছর বাংলাদেশ ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণের নতুন নিয়ম চালু করায় অলস অর্থের পরিমাণ কমানো হয়। বিশাল অঙ্কের এই অলস টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ব্যাংকগুলোও। বিপুল পরিমাণ এই অর্থ বিনিয়োগে না এলেও আমানতকারীদের সুদ গুনতে হচ্ছে। ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ অবস্থা থেকে বেরোতে না পারলে কোনো কোনো ব্যাংক লোকসানের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক  ৬৯ শতাংশ। তবে পরের মাসেই তা নেতিবাচক হয়ে যায়। গত আগস্টে যেখানে বেসরকারি খাতে মোট ঋণ স্থিতি ছিল ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। সর্বশেষ অক্টোবর শেষে তা দুই হাজার কোটি টাকা কমে ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশের পরও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এসএমই, কৃষি ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারেনি। বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে ব্যাংক খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর গত অর্থবছর শেষে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ০৭ শতাংশ হলেও চলতি অর্থবছর তা কমে শূন্য (০) দশমিক ৬২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পুরো সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। যা গেল অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে ছিল ১ দশমিক ০৭ শতাংশ। অন্যদিকে সরকারি খাতে এই প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে ঋণাত্মক পর্যায়ে। বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত স্থানীয় বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ৩১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল এক হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। তৃতীয় প্রান্তিকে তা কমে স্থানীয় বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ও বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৮৪৩ কোটি টাকা। মোট বিনিয়োগ শতাংশ হিসেবে কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়লে দেশে নতুন নতুন শিল্প গড়ে উঠে। যা নতুন নুতন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। এতে বেকারত্ব দূর হয়। পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ে। যা রপ্তানি আয়ে এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সার্বিক অর্থনীতিতে গতি বাড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে বিনিয়োগের জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার বর্তমানে তা এর ঘাটতি রয়েছে। উদ্যোক্তাদের মাঝে এক ধরনের অনিশ্চয়তা এবং আস্থাহীনতা কাজ করছে ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে আছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর