বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মন্ত্রী-এমপির প্রচার নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়াল ইসি

গোলাম রাব্বানী

মন্ত্রী-এমপির প্রচার নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়াল ইসি

পৌর নির্বাচনী প্রচারে সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের ‘সুবিধা’ দিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাব ‘নাকচ’ করে দেওয়া হচ্ছে। আচরণবিধিতে মন্ত্রী-এমপিসহ সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের নির্বাচনী এলাকায় সফর ও প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রেখে বিধিমালা সংশোধন প্রক্রিয়ায় ভেটিং দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। নির্বাচন কমিশন এমন প্রস্তাব দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে মুখ খুলছে না নির্বাচন কমিশনের কেউ। তবে প্রচারে সুযোগ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে এখনো দ্ব›দ্ব চলছে। ইতিমধ্যে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারে সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি বেখেয়ালে হয়ে গেছে। গতকালও নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে কমিশন। এর পরও কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

আইন মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত আচরণবিধিতে সরকারি সুবিধাভোগীদের ‘সুবিধা’ দিতে চেয়েছে ইসি। তবে মন্ত্রণালয় বিদ্যমান স্থানীয় সরকারের অন্য আইনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এ সুবিধা দিতে চাইছে না। এ সুবিধা বাদ দিয়ে আজকের মধ্যে ভেটিং সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

গত বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ে বিধিমালা ভেটিংয়ের জন্য পাঠায় ইসি। স্থানীয় নির্বাচনে সরকারি সুবিধাভোগীদের প্রচারে যেতে সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবে কঠোর সমালোচনায় পড়ে সাংবিধানিক সংস্থাটি। মঙ্গলবার বিধিমালা সংশোধন নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখন কিছু বলতে চাই না। ভেটিং হয়ে এলে জানাব।’ ইসির আইন শাখার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কোনোভাবেই সরকারি সুবিধাভোগীদের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। ইসির প্রস্তাবে আইন মন্ত্রণালয় ভেটিংয়ে পরিবর্তন আনতে পারে। বিধিমালায় মন্ত্রণালয়ের ভেটিং করা কপি এলে তা পর্যালোচনা করবে ইসি। এ ক্ষেত্রে নতুন কোনো সংশোধনী দরকার হলে তাও যুক্ত করতে পারবে। ভেটিংয়ের পর নতুন কিছু সংশোধনের প্রয়োজন না হলে এসআরও জারির জন্য তা পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে, এমনটাই বলেছেন আইন শাখার কর্মকর্তারা।

গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বসেছিলেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের অনুপস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হলেও তা নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি জাবেদ আলী। তিনি বলেন, ‘কপির অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। এরপর এ নিয়ে কথা বলব।’

আচরণবিধি নিয়ে ‘দ্বৈতাচরণ’ : পৌর নির্বাচনের আচরণবিধির সংশোধনী নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিজেদের মধ্যে ‘দ্ব›দ্ব’ চলছে। ‘সবার জন্য সমান’ সুযোগ তৈরিতে মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ না দিতে খসড়া তৈরি করে রেখেছিল ইসি। পরে একজন নির্বাচন কমিশনার জানান, সুবিধা ছেড়ে সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে পারবেন। এমন প্রস্তাবই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। হঠাৎ একজন নির্বাচন কমিশনার এ অবস্থান নিলে বিপাকে পড়েন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার, রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিরাও ইসির উদ্যোগের সমালোচনা করে এ প্রস্তাবকে ‘অন্যায় আচরণবিধি’ বলে মত দেন। পরে একজন নির্বাচন কমিশনার নিজেদের ‘বেখেয়ালে’ মন্ত্রীদের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। সেই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ে ‘প্রয়োজনীয়’ সংশোধনী আনার সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিধিমালা জারি হলে ভোটের দিণক্ষণ চূড়ান্ত করা নিয়ে বৈঠকে বসবে কমিশন।

 

সর্বশেষ খবর