বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

প্রকৃতির সুইপার শকুন

মোস্তফা কাজল

প্রকৃতির সুইপার শকুন

প্রকৃতির সুইপার শকুনের জাত রক্ষায় প্রকল্প হাতে নিয়েছে বন বিভাগ। এ জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে গাজীপুর জেলার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ককে। সৃষ্টি করা হয়েছে  শকুন পুনর্বাসন কেন্দ্র। এদেশ থেকে বিলুপ্তির পথে শকুন। এক সময় শকুন বেশি দেখা যেত পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে উত্তর-পশ্চিমে নির্জন চরে। এখন সেসব অতীত স্মৃতি। শুধু ময়মনসিংহই নয়, সারা দেশেই এখন শকুনের দেখা মেলা ভার। বন্য প্রাণী ও পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শকুনের জাত রক্ষা করা না গেলে কয়েক বছরের মধ্যে প্রকৃতি কোল থেকে হারিয়ে যাবে। তখন বই ও ছবি দেখে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চেনাতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কোনোভাবে টিকে আছে সরুঠোঁট প্রজাতির শকুন। পার্কের কর্মকর্তারা শকুনের বাচ্চা ফোটানোসহ নিরাপদ প্রজননের ব্যবস্থাও করেছেন। সুস্থ ও নির্মল পরিবেশ নিশ্চিত করতেই নেওয়া হয়েছে এ উদ্যোগ। সিলেট, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১৯ হাজার ৬৬৩ বর্গকিলোমিটার এবং খুলনা, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ২৭ হাজার ৭১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা শকুনের জন্য অভয়ারণ্য ও নিরাপদ বসবাসের এলাকা তৈরির কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিব প্রদাস ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শকুনের জাত রক্ষায় কাজ করছে বন বিভাগ। আমরা ১২টি শকুন নিয়ে প্রজনন সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করছি। শকুন গবেষকরা জানান, ‘এ প্রাণী মৃত পশু-পাখি খেয়ে পরিবেশ দূষণ কমায়। একই সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন রোগের জীবাণু ছড়ানোর হাত থেকেও পরিবেশকে রক্ষা করে। এ কারণে একে বলা হয় প্রকৃতির সুইপার’। গোটা পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতির শকুন থাকলেও বাংলাদেশে দেখা যায় মাত্র সাত প্রজাতির। বর্তমানে দেশে এ প্রাণীটি বিলুপ্ত প্রায়। ভারতে বর্তমানে ১০ হাজারের বেশি শকুন বাস করলেও এ দেশে মাত্র ২৫০টি শকুন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। শকুন হ্রাসের জন্য খাদ্য সংকট, জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে দায়ী করা হচ্ছে।

 জানা গেছে, ৮০ দশকে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া বাজারের পশ্চিমে হাটের দিনে আকাশ কালো করে দল বেঁধে আসত শকুনের ঝাঁক। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের বিভিন্ন সময়ে কংশ নদে ভেসে যাওয়া লাশের ওপর বসত ধূসর শকুন। গরু মহালের আকাশে ছায়া ফেলে চক্কর দিত শকুন-শকুনিরা। ময়মনসিংহ অঞ্চলে এক সময় আকাশের দিকে তাকালেই শকুন আর শঙ্খচিলের দেখা মিলত। মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহ সীমান্তে নেতাই ও সোমেশ্বরী নদীতে ভেসে যেত লাশের পর লাশ। শিববাড়ি ওয়েনজেসি শরণার্থী শিবিরে প্রতিদিন অসংখ্য লোককে হত্যা করা হতো। সেসব লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হতো নদীতে। নেত্রকোনার দুর্গাপুরের শীতলী বিল ভরে গিয়েছিল লাশে। সে সময় লাশের সঙ্গে এ এলাকায় বাড়তে থাকে শকুনের সংখ্যা। প্রখর দৃষ্টিশক্তির অধিকারী পাখিটি বটগাছ, কড়ইগাছ, শিমুল, বাঁশঝাড়, দেবদারু গাছে বাসা বানাত। এদের দৃষ্টি এতটাই প্রখর যে, অনেক উঁচু থেকেও এরা মাটি বা পানির ওপরে থাকা লাশ দেখতে পায়। এ পাখি একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০টি ডিম পাড়ে। তিন সপ্তাহ তা দেওয়ার পর বাচ্চা ফোটে। এর স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ২৫ বছর। তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার হয় এ পাখি।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর