বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ফের সতর্কতা যুক্তরাষ্ট্রের

ঢাকায় যৌথ কমিশনের বৈঠকে ইইউর উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্লগার ও প্রকাশক হত্যা এবং তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তারা বলেছে, এসব হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ লেখক ও ব্লগাররা মুক্তচিন্তার ধারক। এদের হত্যাকাণ্ড কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এদিকে দেশের সার্বিক উন্নয়নে ৬৯ কোটি ইউরো অনুদান দেবে ইইউ। ইইউর সঙ্গে যৌথ কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ  সরকারের মধ্যে সপ্তম যৌথ কমিশন সভা (জেইসি) শেষে বিকাল সোয়া ৫টায় এক ব্রিফিংয়ে ইইউর তরফ থেকে এসব কথা বলা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুশাসন, মানবাধিকার, নতুন বাণিজ্য-কৌশল, বাংলাদেশের শ্রম আইন, ট্রেড ইউনিয়ন, পোশাক কারখানায় কর্মপরিবেশ, সেবা খাতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগসহ (এফডিআই) বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাউদ্দিন এবং ইইউর নেতৃত্ব দেন এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউগো এসটুটু। অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য, আইন, ইআরডিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা বৈঠকে অংশ নেন। ইউগো এসটুটু জানান, বৈঠকে দুই পক্ষের পারস্পরিক বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে কথা হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের মানবাধিকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলাপ হয়। এসটুটু বলেন, ‘যেসব লেখক, ব্লগার ও মুক্তচিন্তার মানুষ হামলা এবং হুমকির শিকার হচ্ছেন আমরা আশা করি সরকার তাদের নিরাপত্তা দেবে।’ বাংলাদেশে আইএসের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইএস সম্পর্কে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। আইএস সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। যদি আইএস এসব ঘটিয়ে থাকে তাহলে যেন সঠিক তদন্ত হয়।’ বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশের অনেক পণ্যের রপ্তানির অন্যতম বাজার ইইউভুক্ত দেশগুলো। এসব দেশে পোশাক, চিংড়ি, হিমায়িত খাদ্য ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে সাহায্য করবে ইইউ। সে লক্ষ্যে ইইউ চলতি সময় থেকে আগামী পাঁচ বছরে ৬৯ কোটি ইউরো অনুদান দেবে। প্রতিবছর ১২ থেকে ১৩ কোটি ইউরো অনুদান আসতে পারে ইইউর পক্ষ থেকে। ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, ইইউ আগামী পাঁচ বছরে ৬৯ কোটি ইউরো অনুদান দেবে। তবে আশা করা যাচ্ছে, প্রতিবছর ১২ থেকে ১৩ কোটি ইউরো অনুদান পাওয়া যাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে দেশে মোট ২৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এসব প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়েও জানতে চেয়েছে ইইউ। ইউগো এসটুটু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইইউর অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চেয়েছি। সিরিয়া ও লিবিয়া ইস্যুতে ইউরোপে শরণার্থীদের চাপ বাড়ছে এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’ এসটুটু বলেন, বাংলাদেশের চাহিদাগুলোর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে সহায়তা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ এবং ইইউ দুই পক্ষের মধ্যে নানা বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ ভ্রমণে ফের সতর্কতা যুক্তরাষ্ট্রের : বাংলাদেশ ভ্রমণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ফের সতর্ক থাকতে বলেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার এ সতর্কবার্তা জারি করা হয়। এতে বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিকদের যথাযথ সাবধানতা ও উচ্চপর্যায়ের নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউএস পাসপোর্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া এ বার্তায় বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হাজারো নাগরিক কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই প্রতি বছর বাংলাদেশ ভ্রমণ করলেও, যারা দেশটিতে থাকেন বা ভ্রমণ করেন তাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। নতুন এ সতর্কতা আগামী বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে।’

এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালির নাগরিক হত্যার দিন এবং পরে ১৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলাফেরায় সতর্ক করা হয়। বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে বিদেশি নাগরিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার, ৩ অক্টোবর জাপানের নাগরিক হোশি কোনিও এবং ২৪ অক্টোবর শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় একজনকে হত্যা করা হয়। এসব হামলার দায় ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্তে (আইএসআইএল) প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে। এরপর ২০১৫ সালে লেখক, প্রকাশক এবং গণমাধ্যমসংশ্লিষ্টসহ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর অব্যাহত হুমকি আসছে। নতুন সতর্কবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ‘সন্ত্রাসী হুমকি বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য এবং আরও হামলা হতে পারে।’ বার্তায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রকাশ্য স্থানে পায়ে হেঁটে, মোটরসাইকেলে, রিকশায় বা অন্যান্য খোলা মাধ্যম ব্যবহার করে চলাচল করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের বড় কোনো সমাবেশস্থল, যেমন আন্তর্জাতিক হোটেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর