শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নেই ৩০ হাজার কোটি টাকা

শেয়ারবাজারে তিন মাসে ভয়ঙ্কর দরপতন

আলী রিয়াজ

নেই ৩০ হাজার কোটি টাকা

দরপতনে প্রান্তে এসে ঠেকেছে শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই লেনদেন, সূচক কমছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ২৮৮ কোম্পানির প্রায় সব কটিরই শেয়ার দর কমেছে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে গত তিন মাসের ব্যবধানে শেয়ারবাজার মূলধনের প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ‘নেই’ হয়ে গেছে।

দরপতনের কারণে শেয়ার সূচক গত মে মাসের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। মুনাফা দূরে থাকুক নিজের বিনিয়োগের টাকা ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার কারসাজি সিন্ডিকেট অপ্রতিরোধ্য হওয়ায় বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। প্রতিদিন সূচক কমে, আর নির্দিষ্ট কিছু শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলে। এ কারণেই শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা গায়েব হয়ে যায়। এখনই উদ্যোগ না নিলে শেয়ারবাজারে সামনে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে একটানা দরপতন ঘটেছে। তিন মাসের মধ্যে ডিএসইর সূচক বেড়েছে ১২ দিন। বাকি দিনগুলোয় সূচক শুধু কমেছে। চলতি বছর বাজেটে বেশ কিছু প্রণোদনার কথা ঘোষণা করা হলে বাজার কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠলেও কয়েক দিন পরই তা স্তিমিত হয়ে যায়। চলতি বছরের মে মাসে যেখানে ডিএসই সূচক ছিল ৪৭০০ পয়েন্টের কাছাকাছি, বছরের শুরুতে যা ৫০০০ পয়েন্টের বেশি; সর্বশেষ তা ৪৫০০ পয়েন্টের নিচে নেমে ৪৩০০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমলেও এই সময় নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেড়েছে। সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজিতে এসব কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি পায়। ফলে বিএসইসি গত মাসে ছয়টি কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালকদের কাছে। এর মধ্যে সুহƒদ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক জাহিদুল হকের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে প্রাইভেট কোম্পানি ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়েও কারসাজি করার অভিযোগ পেয়েছে বিএসইসি। সম্প্রতি তিতাস গ্যাসের শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই পরিস্থিতি। তিন মাসে সিএসইর বাজার মূলধন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা নেই। সিএসইর সূচক, লেনদেনেও পতন অবস্থা চলছে ধারাবাহিকভাবে। শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, জুয়াড়িরা সক্রিয় থাকলে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল হবে কীভাবে? এ ছাড়া এসইসি যে ধরনের কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়, তাতে সব কটির শেয়ার নিয়েই কারসাজি হয়। ছোট মূলধনী কোম্পানি দিয়ে কখনো শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে না। বাজারে এখন এমন কতগুলো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, যেগুলোর শেয়ার নিয়ে সিন্ডিকেট চক্র খেলায় মেতে উঠেছে। যার ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা না জেনেবুঝে বিনিয়োগ করেন, আর সব মূলধন হারান। এর পরও ব্যাংকগুলোকে সুযোগ দিতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনতে নেই। দেশের বড় বড় টেলিকম কোম্পানি আছে, তাদের যেভাবে হোক বিশেষ সুবিধা দিয়ে হলেও বাজারে নিয়ে আসতে হবে। নইলে সিন্ডিকেট চক্র থেকে শেয়ারবাজার মুক্ত হবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর