শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অন্তহীন সমস্যায় লক্ষীপুর সদর হাসপাতাল

সাইদুল ইসলাম পাবেল

অন্তহীন সমস্যায় লক্ষীপুর সদর হাসপাতাল

অন্তহীন সমস্যা নিয়ে চলছে লক্ষীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। চিকিৎসক ও জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিকল ও দালালদের দৌরাত্নযরে কারণে সেবাবঞ্চিত ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে চিকিৎসকদের অসদাচরণ, টাকা ছাড়া সেবা না মেলা, সরকারি ওষুধ না পাওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। জেলা সিভিল সার্জন বলছেন, জনবল সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ সবার। এতে করে জেলায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার‌্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী ২০০৩ সালে লক্ষীপুর সদর হাসপাতালকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। যদিও প্রয়োজনীয় এখনো লোকবলের প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়নি হাসপাতালটিতে। অথচ জেলার জনসংখ্যা

ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে উন্নীত হয়েছে প্রায় ১৬ লাখে। আর এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সুপারিশকৃত জনবলের পদসংখ্যা ১৫০টি। এর মধ্যে প্রস্তাবিত ও শূন্যপদ মিলিয়ে এখন ৭৯টি পদ খালি রয়েছে। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে মঞ্জুরিকৃত ১০৪টি পদের মধ্যে ৩৩টি পদই শূন্য। সিনিয়র কনসালটেন্টের চারটি পদের মধ্যে কার্ডিওলজি, গাইনি ও ইএনটি পদ শূন্য, জুনিয়র কনসালটেন্ট আটটি পদের মধ্যে অর্থোপেডিক ও প্যাথলজি পদ শূন্য, ইএমও পদে এক এবং এমও পদে তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। সিনিয়র স্টাফ নার্স ও স্টাফ নার্সের ৪৩টি পদের মধ্যে ১৮টিসহ ৩৩টি পদ শূন্য। এই শূন্যতার কারণে প্রতিনিয়ত চিকিৎসক ও নার্সদের বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ১২০০ থেকে ১৪০০, জরুরি বিভাগে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন, অন্তর্বিভাগে ২০০ থেকে ২২০ জন রোগী ভর্তি থাকেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র। এদিকে প্রতিদিন রোগীদের টিকিটের অপেক্ষায় কাউন্টারে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সুযোগে দালালরা টিকিট প্রাপ্তির দীর্ঘ লাইনের জটলায় ফেলে পাঁচ টাকার টিকিট বিক্রি করেন ১০৫ টাকায়। কেউ বাধ্য হয়ে কেনেন আবার কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে টিকিট না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যান বলে অভিযোগ করেন। শিশু ওয়ার্ড, ডায়রিয়া, মেডিসিন ওয়ার্ডের অবস্থা আরও নাজুক। ভর্তি রোগী ও স্বজনদের কেউ বলছেন, চিকিৎসকরা অসদাচরণ করেন, কেউ বলছেন টাকা ছাড়া সেবা পান না। টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। বিশুদ্ধ পানি নেই হাসপাতালে। সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন রোগীরা। অন্যদিকে হাসপাতালের পাঁচটি এক্সরে মেশিনের মধ্যে চারটি বিকল হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। একটিতে অল্প-স্বল্প কাজ করা হলেও সরকার-নির্ধারিত টাকার চেয়ে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে। বহিরাগত লোক দিয়ে কাজ করানো ও ফিল্ম কেনার অজুহাত দেখিয়ে বাড়তি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন এক্সরে টেকনোলজিস্ট মো. ছেফায়েত উল্লাহ। এদিকে আলট্রাসনোগ্রাফি বিভাগে ঝুলছে তালা। হাসপাতালের আরএমও ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন দালালের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এর পরও আমরা ডাক্তার ও নার্সরা পুরোপুরি যে সৎ সে কথা বলা যায় না।’ জেলা সিভিল সার্জন ডা. জি এম ফারুক ভূঁইয়া জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার লেখালেখি করেও লোকবলের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ১০০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত হলেও ৫০ শয্যার লোকবলও নেই এখানে। চিকিৎসক ও জনবল সংকটে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কিছু অসাধু চক্রের কারণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে স্বীকার করে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর