শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

অরক্ষিত বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

মোস্তফা কাজল ও লাকমিনা জেসমিন সোমা

অরক্ষিত বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

চরম নিরাপত্তা সংকটে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। ঢাকার অদূরে গাজীপুরে দেশের বৃহত্তম সাফারি পার্কটিতে শুরু থেকেই রয়েছে লোকবল সংকট। পর‌্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মীর অভাবে এখানে রাতের বেলা চলে ত্রাসের রাজত্ব। এমনকি দিনের আলোতেই পার্কের কোলঘেঁষে বসে জুয়ার আড্ডা। বখাটেদের খপ্পরে পড়ে প্রায়ই মোবাইল ফোন সেট, ক্যামেরা কিংবা টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারান দর্শনার্থীরা।

অভিযোগ রয়েছে, পার্ক নির্মাণের শুরু থেকেই অবৈধ টেন্ডারবাজিসহ পার্কসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে আসছিল স্থানীয় রাজনৈতিক ক্যাডারদের বেশ কয়েকটি গ্রুপ। এদেরই একটি অংশ এখন পার্কের আশপাশে গড়ে ওঠা জুয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে। পার্কঘেঁষা শালবনের ভিতর চরকা বসিয়ে জুয়ার আসর বসায় তারা। সেই সঙ্গে চলে মাদক সেবন।

জানা গেছে, থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের আদলে গড়া প্রায় ৪ হাজার একর জমির ওপর এ বিশাল আয়তনের পার্কের জন্য নাইটগার্ড বা নিরাপত্তাকর্মী আছে মাত্র ছয়জন। শুধু তাই নয়, লোকবল সংকটের কারণে এ ছয়জনকেই আবার নিজ দায়িত্ব ছাড়াও অন্য কাজও করতে হয়। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিবপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জন্য নেতিবাচক হলেও সত্য, এখানে নিরাপত্তার জন্য পর‌্যাপ্ত লোক নেই। কোনোরকম জোড়াতালি দিয়েই চলছে পার্কের নিরাপত্তাব্যবস্থা। আশপাশের জুয়ার আড্ডা উচ্ছেদে বেশ কয়েকবার ব্যবস্থা নিলেও পরে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়।’ দর্শনার্থীদের হয়রানির বিষয়টি স্বীকার করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পার্কের বাইরে এমন দু-একটি ঘটনা ঘটলেও ভিতরে কখনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

বুধবার সরেজমিন পার্কের দুই দিকে শালবনে গাছগাছালির আড়ালে মাদক সেবনের চিত্র দেখা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্কের ভিতরে একজন স্টাফ বলেন, এরা সবাই বিভিন্ন পার্টি করে। এদের পুলিশ দেখেও দেখে না। পার্কে দর্শনার্থী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন পার্কে গড়ে দুই-আড়াই হাজার দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন। আর শুক্রবার কিংবা ছুটির দিনে এ সংখ্যা ১০ হাজারও ছাড়িয়ে যায়। বিস্তৃত শালবন আর সবুজ প্রকৃতির মাঝে পশুপাখির অবাধ বিচরণ দেখে পার্কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন সবাই। কেবল ভিতরে-ভিতরে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। পার্কের ভিতর মূল অফিস ভবনসংলগ্ন দুটি অফিসার্স কোয়ার্টার কিছুটা নিরাপত্তায় থাকলেও পার্কের প্রান্তদেশে দর্শনার্থীদের একমাত্র বিশ্রামাগার বাংলোটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত বলা চলে। ‘বনবিলাস’ নামে এ বাংলো দর্শনার্থীদের জন্য হলেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ এটি ভাড়া দেওয়ার সাহস পায় না। আর রাতের বেলায় তো প্রশ্নই ওঠে না। এ বাংলোয় বর্তমানে একজন কুমির গবেষক থাকছেন। টঙ্গী থেকে আসা মহিদুল শিকদার নামে এক দর্শনার্থী বলেন, “কিছু দিন আগে বন্ধুদের সঙ্গে এসে স্থানীয় একটি গ্রুপের সঙ্গে ‘ঝামেলা’ বেধেছিল। শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোন সেট, মানিব্যাগ সব হারিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এর পরও পার্কটি ভালো লাগে বলে আবার এলাম।” পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, মাত্র ৪৭টি পদের অর্গানোগ্রাম নিয়ে এ পার্কের যাত্রা শুরু হয়। পরে পদ বাড়িয়ে ৬০টি করা হলেও এখন পর্যন্ত ৪৭ জন দিয়েই চলছে পার্কটি। কেবল নিরাপত্তাপ্রহরীই নয়, এখানে পশুপাখির জন্য নেই অ্যানিমল-কিপার, ভালো ডাক্তার, গবেষক কিংবা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। ৩০টি ভেন্যুর জন্য গেটম্যান রয়েছে মাত্র ছয়জন। পুরো পার্কের জন্য আছে মাত্র দুজন ক্লিনার। গত পয়লা বৈশাখেও পার্কে বেড়াতে এসে বাঘের থাবায় হাত হারান এক দর্শনার্র্থী।

সর্বশেষ খবর