শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
কলকাতার চিঠি

ভারতের সেই মহিমা ধুলায় মেশানোর জন্য দায়ী দুই ব্যক্তি

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের যে মহিমা ছিল, ১৮ মাসের ভারতবর্ষের সেই মহিমা ধুলায় মিশে গেছে। আর এর জন্য দায়ী দুই ব্যক্তি। একজন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত, আরেকজন তার শিষ্য দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা ভাষায় নিন্দা করে বলেছে, এরাই আসল সন্ত্রাসবাদী। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব বলেছেন এ দুজনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাই দেশবাসীর ঐক্য।

ক্ষমতায় আসার সাত দিনের মধ্যে শুরু করেছিল মহারাষ্ট্রে গোমাংস নিষিদ্ধ করে। এখন তারা ধরেছে বিশ্ববিখ্যাত জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়কে। আরএসএস মুখপত্রে  বলা হয়েছে, জওহর লাল ছিলেন সমাজতন্ত্রী। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সমাজতন্ত্র প্রচারের আখড়া। দিলি­র শিক্ষকমহল এখন আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে, কবে বিশ্ববিদ্যালয়টার নামই বদলে দেয় মোদি সরকার। ইতিমধ্যে দেশের নামকরা, প্রতিষ্ঠিত প্রায় ৭০ জন ঐতিহাসিক বিজ্ঞানী তাদের সরকারি খেতাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। ধর্মীয় সহনশীলতা বজায় রাখার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল বিজেপি-আরএসএসের আচরণে দেশে বর্তমানে যে ‘হিন্দুত্ববাদের’ বাড়বাড়ন্ত চলছে তাতে বিরক্ত হয়ে ১৫ দিনে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তিন তিনবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে মিছিল করে রাষ্ট্রপতির কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। কংগ্রেস আমলে এবং স্বাধীনতার আগে দিলি­তে যে ব্যক্তিদের নামে রাস্তা, ভবন ছিল সেগুলোর নামও পাল্টানো শুরু হয়েছে। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নামে আওরঙ্গজেব লেনের নাম পাল্টানোর কথা ঘোষণা করা হয়ে গেছে। ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম চিত্রতারকা শাহরুখ খান এ ব্যাপারে মুখ খুলতেই আরএসএস রে রে করে উঠেছে। তাকে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শাহরুখকে পাকিস্তানে যাওয়ার পরামর্শে গোটা দেশে একটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিজেপির শাখা সংগঠন হিন্দু মহাসভা, বজরং দল নেতারা ভারতের সংখ্যালঘুদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। কংগ্রেস রাষ্ট্রপতিকে বলে এসেছে, দেশে এত বড় ঘটনা ঘটছে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আরএসএসের ভয়ে মুখ বুজে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার ঘটনায় ঘুরিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শিখ দাঙ্গার জন্য কংগ্রেসকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গী, হিন্দু মহাসভার স্বাধী প্রাচী, সাক্ষী মহারাজ, যোগী আদিত্যনাথ প্রতিদিন কোনো না কোনো অজুহাতে গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়াচ্ছেন। পাকিস্তানের বিশিষ্ট গজল শিল্পী গুলাম আলি দিলি­তে তার অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছেন। এর আগে শিবসেনার চাপে মুম্বাইয়ে তাকে অনুষ্ঠান না করেই ফিরে যেতে হয়েছিল। অসুস্থতার কথা বললেও দেশের রাজনৈতিক মহল মনে করছে আরএসএসের গুণ্ডামির জন্যই তিনি আসছেন না। শাহরুখ খানকে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া মাত্রই পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী নেতা হাফিজ সঈদ বিবৃতি দিয়েছে, ভারতে শাহরুখ খানসহ যে মুসলিমরা থাকতে পারছেন না তারা পাকিস্তানের মাটিতে স্বাগত। প্রায় কাছাকাছি বক্তব্য পেশ করেছেন প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফও। জওহর লাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়–য়াদের সরাসরি সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করেছে আরএসএস। দেশের বুদ্ধিজীবীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে বলছেন, দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করা জাতির পক্ষে অপমানজনক। আবার কেউ বলছেন এই ইতিহাস বিকৃতি শুরু করেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান অ্যান্ড কোম্পানি। সেই ধারাই অনুসরণ করছে আরএসএস। মোদি মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে মুসলিমবিরোধী কথাবার্তা বলার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। ভারতকে সহিষ্ণুতার শিক্ষা দিয়ে গেছেন মহাত্বা গান্ধী। এর বিপরীত ফল যে কী হতে পারে তা এখনো অনুমান করতে পারছে না বিজেপি-আরএসএস।

সর্বশেষ খবর