রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা সতর্কতা দেশজুড়ে

রাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রশ্নে আগামী তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। কয়েক ধাপের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ ঘিরে। নজরদারি বাড়াতে সরকারের সবকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগের চেয়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ তথ্য দিয়ে বলেছে, ফ্রান্সে সন্ত্রাসীদের সিরিজ হামলার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিছু নতুন কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে নিরাপত্তায়। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রশ্নে আগামী তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন মাস দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিলের কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্রমশ বাড়তে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঢাকায় ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার ও রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা, ঢাকায় তাজিয়া মিছিল প্রস্তুতিস্থলে বোমা হামলায় একজনের মৃত্যু এবং আমিনবাজারে দায়িত্বরত পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম মোল্লাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তোলে। এর মধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থা বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়। সেই মতে সারা দেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ফ্রান্সে হামলার পর বাংলাদেশে নিরাপত্তা আরও জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, নাশকতা ও হামলার আশঙ্কায় ইতিমধ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.), চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরসহ দেশের সবকটি বিমানবন্দরে হলুদ সতর্কতা বা ইয়েলো এলার্ট জারি রয়েছে। এ ছাড়া রেলওয়ে স্টেশন, সব বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম বন্দর, আদালত ভবন, গুরুত্বপূর্ণ তেল ও গ্যাস স্থাপনা, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, বেতার ভবনসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ৬৮টি কারাগার ও  গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সব থানা ও পুলিশ ফাঁড়িকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের সবগুলো শহরে। বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা থেকে গতকাল সকাল থেকে নতুন করে কিছু পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। যে কোনো সময়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও র‌্যাব ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশের সবগুলো মেট্রোপলিটন এলাকাসহ সব থানার পুলিশ থাকবে স্ট্যান্ডবাই। রাস্তায় রাস্তায় টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। দেশের প্রত্যেক জেলার এসপিদের এ বিষয়ে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতাবস্থায় থাকার নির্দেশ পেয়েছি। কোনোভাবেই যাতে নিজেদের এলাকায় কোনো বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড না ঘটে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ পেয়েছি। গোয়েন্দা শাখার সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ‘কি পয়েন্ট ইন্সটেলশন’ বা কেপিআই জোন এবং আশপাশ এলাকায় বেশকিছু চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচলকারীদের ব্যাগেজ ও দেহ তল্লাশি করা হয়। এসব চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তা পর্যবেক্ষণ করছেন। গতকাল এসব চেকপোস্ট বেশ সক্রিয় ছিল। আজ চেকপোস্টগুলো আরও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্র জানায়, সরকারি ব্যবস্থাপনার রেডিও-টেলিভিশন সেন্টার, আণবিক শক্তি কমিশন, ডিএফপি নিয়ন্ত্রণাধীন দফতর, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাস সরবরাহ স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে পুলিশি পাহারার পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া কূটনৈতিকপাড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর