রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দখল চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মেয়র খোকনের ‘জিহাদ’ ঘোষণা

সাঈদুর রহমান রিমন ও রফিকুল ইসলাম রনি

দখল চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মেয়র খোকনের ‘জিহাদ’ ঘোষণা

ফুটপাথ হকারমুক্ত করা, দখল এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এ লক্ষ্যে দুই মাসের একটি বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি। প্রথম ধাপে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান দিয়ে মিশন শুরু করেছেন তিনি। আগামী জানুয়ারির মধ্যেই মতিঝিল, নিউমার্কেট, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদসহ ১৪২টি পয়েন্টকে হকার, দখল ও চাঁদাবাজিমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করার প্রয়াস নিয়েছেন। উচ্ছেদকৃত হকারদের নতুন জায়গায় পুনর্বাসন করা হবে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার অংশ হিসেবে এ কাজ শুরু করা হয়েছে। এ জন্য ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে,  ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৯০ কিলোমিটার ফুটপাথের মধ্যে ৬৬ কিলোমিটার ফুটপাথই অবৈধ দখলে। প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় ফুটপাথ দখল করে এসব জায়গার ১৪২টি পয়েন্টে বসেছে বিভিন্ন পণ্যের পসরা। তার মধ্যে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, দিলকুশা, কাপ্তানবাজার, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, জুরাইন, নিউমার্কেট, সাইন্সল্যাবরেটরিসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দুই পাশ দখল করে হকাররা পসরা সাজিয়ে বসে। এসব স্থানে পথচারীদের চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ফুটপাথ ছাড়িয়ে মূল সড়কের অর্ধেকটাও জুড়ে বসে পণ্যের পসরা। আবার ফুটপাথে দোকান করার কারণে ব্যবসায়ীদেরও প্রতিদিন লাইনম্যানকে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। লাইনম্যানদের উঠানো চাঁদার টাকা চলে যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে স্থানীয় মাস্তান, পুলিশ এমনকি ফুটপাথ দেখভালের দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের অসাধু কর্তাদের কাছেও। এর বাইরে বিভিন্ন এলাকায় টহল পুলিশও ফুটপাথের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আলাদা চাঁদা নিচ্ছে। এতে করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়রের ঘোষিত প্রতিশ্রুতি বাসযোগ্য নগরী, দখলমুক্ত ফুটপাথ ঘোষণা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল। সে কারণে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। এ জন্য তিনি হকার্স সমিতি, ছিন্নমূল হকার্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দসহ গুলিস্তানের হকার্স নেতাদের নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন। এতে সিদ্ধান্ত হয়, গুলিস্তানে ৩ হাজার ২০০ থেকে সাড়ে তিন হাজার হকারকে তালিকা তৈরি করে নতুন জায়গায় পুনর্বাসন করা হবে। সিটি করপোরেশনকে একটি টোকেন রাজস্ব দিয়ে তারা ব্যবসা করতে পারবেন। এসব হকারের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে শনাক্ত করার ব্যবস্থাও থাকবে। এ জন্য কাজ করতে সংস্থার প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেন মেয়র। কমিটিতে হকার্স ফেডারেশনের নেতা, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পুলিশের প্রতিনিধি রয়েছেন। মতবিনিময় সভায় হকার্স ফেডারেশনের নেতারা মেয়রের কাছে অভিযোগ করেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, রাস্তার পাশের মার্কেটের মালিক, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের লোকজন হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিচ্ছেন।  এর জবাবে মেয়র সাঈদ খোকন তাদের বলেন, কাউকে কোনো ধরনের চাঁদা দেবেন না। কেউ চাঁদা নিতে এলে তাকে ধরিয়ে দেবেন। না হলে আমাকে জানাবেন, আমি পুলিশ দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেব। মেয়র সাঈদ খোকন গত রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজধানীকে সুন্দর পরিচ্ছন্ন ও বাসোপযোগী করতে চাই। প্রথম দফায় গুলিস্তান এলাকাকে ‘ক্লিন গুলিস্তান’ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সমস্যার সমাধান যাত্রা শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে মতিঝিল, পল্টন, দৈনিক বাংলা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, নিউমার্কেটসহ অন্যান্য ফুটপাথকে হকার, দখল ও চাঁদাবাজমুক্ত করা হবে। এ জন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। সাঈদ খোকন আরও বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কোনো ফুটপাথ দখল থাকবে না, কোনো রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ কেউই চাঁদাবাজি করতে পারবেন না। যদি কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিটি মেয়রের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা জানিয়েছেন, হকারদের দখলের ফুটপাথগুলোতে মানুষের চলাফেরাই দায় হয়ে পড়েছে। তবে ফুটপাথেও অনেক মানুষ জীবন-জীবিকা করে থাকেন। তাদের বিকল্প ব্যবস্থা না করলে মানুষগুলো বেকার হয়ে পড়বে। এমনকি কর্মসংস্থান না পেলে অপরাধ কর্মে জড়িয়ে যেতে পারেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, রাজধানীর অনেক ফুটপাথ এখন হকারের দখলে। মানুষের চলাফেরায় কষ্ট হয়। ফুটপাথকে দখলমুক্ত করতে মেয়র যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা একটি ভালো উদ্যোগ। তবে আবার ভাবতে হবে, দেশে জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সে পরিমাণ কর্মসংস্থান নেই। ফুটপাথেই হাজার হাজার মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের উচ্ছেদ করলেই হবে না যথাযথভাবে পুনর্বাসনও করতে হবে। সঠিকভাবে পুনর্বাসন করা হলে এর সুফল নগরবাসীর কাজে আসবে।

সর্বশেষ খবর