রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
সফল মানুষ

থাই পেয়ারায় কৃষক বাকির ভাগ্য বদল

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

থাই পেয়ারায় কৃষক বাকির ভাগ্য বদল

থাই পেয়ারার আবাদ করতে নাটোরের বাগাতিপাড়ার কৃষক আবদুল বারী এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এটা প্রায় সাত বছর আগের কথা। এখন তিনি এই পেয়ারা চাষ করে মালিক হয়েছেন নগদ অর্ধ কোটি টাকার। শুধু তা-ই নয়, শুরুতে জমি ছিল ৬ বিঘা, এখন হয়েছে ১০০ বিঘা।

আবদুল বারী এই পেয়ারা চাষ করে নিজে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন, তেমনি এলাকার অনেক বেকারকে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছে তার থাই পেয়ারার আবাদ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৃত্তিকা পরীক্ষাগারে মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে কীটনাশক ছাড়াই তিনি এখন ১০০ বিঘা জমিতে থাই পেয়ারার চাষ করছেন। তার উৎপাদিত পেয়ারা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বারী জানান, কৃষি ঋণসহ অন্যান্য সরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি আগামীতে পেয়ারার বাগান সম্প্রসারণের পাশাপাশি মাল্টা, ড্রাগন ফল, শরিফা ও হাইব্রিড নারিকেলসহ রকমারি সব উন্নত ফলের চাষ করতে চান। জানা যায়, বাগাতিপাড়া উপজেলার খন্দকার মালঞ্চি গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে আবদুল বারী ওরফে বাকী ১৯৯৪ সালে এসএসসি পাস করে বাগাতিপাড়া ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হলেও নানা প্রতিকূলতায় পড়াশোনায় এগোতে পারেননি। বারী জানান, চতুর্থ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হন। ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল, কৃষি কাজ করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলবেন। সেই স্বপ্ন থেকেই শুরু করেন পেয়ারা, পেঁপেসহ নানা ফলের চাষ। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে তার ফলের বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও থেমে থাকেননি স্বপ্নের যাত্রা। বার বার নতুন করে ঝুঁকি নিয়েছেন এবং ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তার প্রায় আড়াই বিঘা জমির পেঁপে গাছ ভেঙে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এ দুর্যোগে অবশ্য ২০০৭ সালে শুরু করা পেয়ারা বাগানে কোনো প্রভাব ফেলেনি। এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ান বাকী। তার পেয়ারা বাগানে এখন প্রায় পঞ্চাশজন শ্রমিক নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। প্রতিজন শ্রমিকের মজুরি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। আবদুল বারীর নিজস্ব জমির পরিমাণ কম হলেও প্রতিবিঘা ৮ থেকে ১২ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে তিনি এখন রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও বাগাতিপাড়ায় প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন। পেয়ারা বাগানে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে মাসুম রেজা, ঝন্টুক্ষু, মজনু, মাহাবুর রহমান, আবদুল জলিল, সজন, মানিক চন্দ্র সাধু খাঁসহ বেশ কয়েকজন জানান, ‘কৃষক বাকী পেয়ারা চাষ করায় আমরা নিয়মিত কাজ পেয়েছি এবং তার পারিশ্রমিক দিয়ে নিজের ও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে সংসারের উন্নতি করছি।’ বাগাতিপাড়ায় কর্মরত সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাস ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সরকারের অনুপ্রেরণায় বারী থাই পেয়ারার চাষ শুরু করেন বলে জানান। শুরুতে তিনি পুঠিয়ার এক চাষির কাছ থেকে থাই পেয়ারার চারা নিয়ে বাগান করেছিলেন। বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, ‘আবদুর বারীকে একজন সফল চাষি বলা যায়। তাকে ঋণ সুবিধা পাওয়ার জন্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনি পেয়ারা, মাল্টা, শরিফাসহ অন্যান্য ফলের চাষ করতে চাইলে প্রযুক্তিগত সব সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর