সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চার দশকেও হয়নি রাজধানীর সীমানা

নির্ধারণ করা যাচ্ছে না আয়তন জনসংখ্যা শিক্ষা কিংবা নারী-পুরুষের হার

মোস্তফা কাজল

চার দশকেও হয়নি রাজধানীর সীমানা

চার দশকেও রাজধানীর সীমানা চিহ্নিত করা হয়নি। দুই সিটি করপোরেশনসহ রাজধানীকেন্দ্রিক বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান নিজেদের সুবিধামতো সীমানা ঠিক করে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। আইনের মাধ্যমে রাজধানীর সীমানা নির্ধারণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও স্বাধীনতার চার দশকেও তা সম্ভব হয়নি। ফলে বিশৃঙ্খল অবস্থায় চলছে সব ধরনের কর্মকাণ্ড। এতে আয়তন, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার কিংবা নারী-পুরুষের হারসহ অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে নির্ণয় করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি সেবা দিতে গিয়েও বিভিন্ন সংস্থা সীমানা জটিলতায় পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাজধানীর সীমানা নির্ধারণে নগর পরিকল্পনাবিদ ও ভূ-তত্ত্ববিদদের সঙ্গে সরকারি নীতি-নির্ধারকদের আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৪০০ বছরের পুরনো শহর ঢাকা। এই শহরকে বার বার প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বেছে নিয়েছেন শাসকরা। বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই প্রাচীন জনপদকে ১৬১০ সালে মোগল সুবেদার ইসলাম খাঁ সর্বপ্রথম বাংলার রাজধানী ঘোষণা করেন। অবশ্য তখন সীমানার প্রচলন ছিল না। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে দুই বাংলাকে পৃথক করার পরও ঢাকাকেই পূর্ব বাংলার রাজধানী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ও স্বাধীন বাংলাদেশেও রাজধানী হিসেবে ঢাকা বহাল থাকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর গৃহীত সংবিধানে ঢাকাকে রাজধানী উল্লেখ করে সীমানা নির্ধারণে আইন প্রণয়নের বিধান রাখা হয়। এ ছাড়া রাজধানীর সীমানা নিয়ে সংবিধানের পঞ্চম অনুচ্ছেদে বলা হয় ১. প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ঢাকা। ২. রাজধানীর সীমানা আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।

ঢাকা জেলা প্রশাসন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সিটি করপোরেশন- কারও কাছেই সীমানার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। রাজউক তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে সীমানা ঠিক করেছে তা সিটি করপোরেশন, এমনকি ঢাকা জেলার সীমানাকেও ছাড়িয়ে গেছে। রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফ আলী আখন্দ বলেন, উত্তরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ সীমানা, দক্ষিণে  ধলেশ্বরী নদী। পূর্বে রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী এবং পশ্চিমে ধলেশ্বরী ও বংশী নদী হচ্ছে রাজউকের প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত সীমানা। কোথাও কোথাও আয়তন বা সীমানার কিছুটা তারতম্য ঘটতে পারে। ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি, ওয়াসা, ডেসা, সিটি করপোরেশনসহ বেশকিছু সংস্থা নিজেদের কাজের সুবিধার্থে সীমানা নির্ধারণ করে কাজ করছে জানিয়ে আশরাফ আলী আখন্দ আরও বলেন, একক নির্দিষ্ট সীমানা এখানে মুখ্য নয়। ঢাকা সিটি করপোরেশন নামে দীর্ঘকাল অবিভক্ত একটি কাঠামো থাকলেও ২০১১ সালে সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে তা দুই ভাগ করা হয়। তবে অবিভক্ত সিটি করপোরেশনই যে রাজধানী, আইনে  কোথাও স্পষ্ট করে তখনো বলা হয়নি। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যে সীমানা, তা জনসংখ্যার হার অনুযায়ী ঠিক হয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বিভিন্ন এলাকার জনসংখ্যার বিবেচনায় ডিএমপি তাদের থানার সীমানা নির্ধারণ করে। সিটি করপোরেশনের বাইরেও ডিএমপির থানাগুলোর সীমানা রয়েছে। আগামীতে মহানগরীতে আরও নতুন থানা সৃষ্টি হলে ঢাকা মহানগরীর আয়তন আরও বেড়ে যাবে। হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর, ডেমরা, কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডাসহ ডিএমপির আরও কিছু থানার সীমানা সিটি করপোরেশনের সীমানাকে ছাড়িয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজধানী ঢাকার সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণের দাবি তোলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনও। নগর গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ ড. নজরুল ইসলাম মনে করেন, সরকারকেই রাজধানীর সীমানার বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকাকে কেন্দ্র করে রাজউক, ডিএমপি ও দুই সিটি করপোরেশন রয়েছে। সরকার চাইলে এর কোনো একটির সীমানাকে রাজধানীর সীমানা বলে ঘোষণা করতে পারে। আবার এই তিন প্রতিষ্ঠানের বাইরে গিয়েও রাজধানীর সীমানা নির্ধারণ করতে পারে।

সর্বশেষ খবর