মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পড়ে আছে হাজার কোটি টাকার পণ্য

রিট নিষ্পত্তির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে ‘লিগ্যাল সলিউশন গ্রুপ’

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

পড়ে আছে হাজার কোটি টাকার পণ্য

চট্টগ্রামের নিলাম শেডে বছরের পর বছর পড়ে আছে হাজার কোটি টাকার পণ্য -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নিলাম পণ্যে ঠাসা চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কাস্টমসের নিলাম শেড। পুরনো শেডে জায়গার সংকুলান হচ্ছে না বলে সম্প্রতি ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের বাইরে নতুন একটি নিলাম শেড তৈরি করা হয়েছে। রিট, দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতি ও সিদ্ধান্তহীনতায় বন্দরে কাস্টমসের নিলাম শেডে নষ্ট হচ্ছে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার পণ্য। ইতিমধ্যে বছরের পর বছর পড়ে থাকার কারণে শত শত কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হওয়ার পথে রয়েছে আরও অন্তত শত কোটি টাকার পণ্য। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব।

এদিকে নিলাম শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নিলাম থেকে ১১ কোটি ১৯ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে নিলাম শাখা থেকে রাজস্ব এসেছে ১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট দুই মাসে নিলাম শাখা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে এক কোটি নয় লাখ ৫৬ হাজার ১৮২ টাকা। কিন্তু ২০১৪ সালের জুলাই-আগস্টে এ শাখা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছিল দুই কোটি ৬৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭১৭ টাকা। গত আড়াই মাসে পাঁচটি নিলাম ডাকা  হয়েছে। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে দুই কোটি ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮৯ টাকা। রাজস্ব আদায়ের অনুমোদন হয়েছে পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬২২ টাকা। সম্প্রতি নিলাম শাখার তৎপরতা বাড়ানো এবং এ শাখাকে আরও গতিশীল করার জন্য বৈঠক করেছেন কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নিলাম-সংক্রান্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রিট নিষ্পত্তির জন্য ‘লিগ্যাল সলিউশন গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, নিলাম পণ্যের মধ্যে রয়েছে দামি গাড়ি, ফেব্রিকস, ইলেকট্রনিক পণ্য, কম্পিউটার এক্সেসরিজসহ নানা ধরনের আমদানি পণ্য। তবে বিডারদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ গাড়ির প্রতি। নিলামে স্বল্পমূল্যে গাড়ি কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাস্টমসে হুমড়ি খেয়ে পড়েন আগ্রহীরা। নিলামে ওঠার তালিকায় থাকে আধুনিক লেক্সাস থেকে বিএমডব্লিউসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। বর্তমানে বিভিন্ন মডেলের শতাধিক কার, প্রায় অর্ধশতাধিক মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, বাস-মিনিবাস, ডাম্প ট্রাকসহ অনেক ধরনের গাড়ি রয়েছে নিলাম শেডে। এর মধ্যে অনেকগুলো গাড়ি বিক্রয়মূল্য বা নিলামমূল্য হারিয়েছে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে। অনেক সময় রিট ও হয়রানির কারণে ব্যবসায়ীরা নিলাম ডেকেও এগুলো সহজে ছাড়াতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকারকদের আনা পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে না নেওয়ার কারণে নিলামযোগ্য হয়ে ওঠে। বন্দরের আইন অনুযায়ী পণ্য আমদানির ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারক তার পণ্য না নিলে তা কাস্টমসকে হস্তান্তর করা হয়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আরও ১০ কার্যদিবসের সুযোগ দিয়ে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে পণ্য ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চিঠি দেয়। এর মধ্যে ওই পণ্যের শুল্কায়ন শুরু হলে আরও ১০ দিন সময় দেওয়া হয়। এর পরও পণ্য না নিয়ে গেলে তা নিলামে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পণ্য আমদানির ৩০ দিনের মধ্যে খালাস করা না হলে তা নিলামযোগ্য হয়ে যায়। তবে বাস্তবে বছরের পর বছর ধরে বন্দরের বিভিন্ন গুদামে পড়ে আছে শত শত কোটি টাকার নিলাম পণ্য। এর মধ্যে বেশির ভাগ পণ্যেরই গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে। লাপাত্তা রয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। কেবল কাগজে-কলমে দায়দায়িত্ব বহন করে চলেছে শিপিং এজেন্ট। সরেজমিন দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমসের দুটি নিলাম শেডের ভিতরে-বাইরে রয়েছে বিভিন্ন পণ্যের স্তূপ। চলছে ইঁদুর, চামচিকা ও নানা কীটপতঙ্গের রাজত্ব। অনেক গাড়ির শুধু খোলসটাই রয়েছে, ইঞ্জিনসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে। শেডের বাইরে সার, চাল, গম, তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের স্তুপ। রয়েছে গার্মেন্ট সামগ্রী, মেশিনারি, কাপড়সহ মূল্যবান পণ্য। স্পর্শকাতর নানা ধরনের কেমিক্যালও ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাখা হয়েছে এখানে। নিলাম বিডকারীদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম মানেই হচ্ছে হয়রানি আর আইনের মারপ্যাঁচ। রয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ নিলামে পণ্য পাবে এমন ঘটনা তেমন নেই। ফলে নিলামযোগ্য পণ্যের স্তুপ বাড়তে বাড়তে তা নিলামযোগ্যতা হারাতে বসে। কাস্টমসের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগে যে হারে নিলাম পণ্য খালাস হতো বর্তমানে সে হারে হচ্ছে না। নিলাম শাখার সার্বিক অবস্থা নিয়ে কাস্টমসের নিলাম শাখার নবনিযুক্ত সহকারী কমিশনার চপল চাকমা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভালো কিছু করার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছি। ইতিমধ্যে লিগ্যাল সলিউশন গ্রুপ গঠনের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি রিটের ফয়সালা করা হয়েছে। এতে রাজস্ব আয়ের মাত্রা বাড়ছে। এ ছাড়া নতুন নিলাম শেড চালু হলে পণ্য নষ্টের হার কমে আসবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর