মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
হিসাব চাইবে দুদক

নূর হোসেনের নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ

মোস্তফা কাজল

নূর হোসেনের নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ

আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নোটিস দেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের তিন সদস্যের বোর্ডসভায় এ অনুমোদন

দেওয়া হয়। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে  বেরিয়ে এসেছে, নূর হোসেন নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ মালিক। এমন তথ্য-উপাত্ত খুঁজে পেয়েছে দুদক। নোটিসে সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে ১৫ কর্মদিবস। নোটিসের জবাবে নূর হোসেনের কোনো অসঙ্গতি থাকলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করবেন দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আদালতের অনুমতি পেলে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাকে। এক বছরের বেশি সময় ধরে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।দৃষ্টি  আকর্ষণ করা হলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পলাতক ও বিদেশে আটক থাকার কারণে নূর হোসেনকে আমরা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। নোটিস জারি করতে পারিনি। দেশে ফেরত আনায় আমরা আইন অনুযায়ী এখন তাকে প্রথমে নোটিস দিচ্ছি। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পরে প্রয়োজনীয় আইনগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গত বছরের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার পর ধীরে ধীরে নূর হোসেনের অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সম্পদভাণ্ডারের তথ্য বের হতে থাকে। প্রভাব খাটিয়ে, প্রতারণা করে, মৃত্যু দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ওই সম্পদ। গত বছরের ২৭ মে নূর হোসেনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অনুসন্ধানে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন। একই বছরের ১৫ জুন এক আদেশে উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। অনুসন্ধানে নূর হোসেনের নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদের তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পান দুদক কর্মকর্তা। নূর হোসেন বর্তমানে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

নূর হোসেনের সম্পদ : খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে নূর হোসেন শুধুই একজন ট্রাক হেলপার ছিলেন। তার নামে রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল মৌজায় ৩৭৩ নম্বর দাগে প্রায় ১১ শতাংশ জমির ওপর সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাঁচতলা বাড়ি। এবিএস পরিবহনের লাক্সারি ৩২টি বাস, শিমরাইল মৌজায় ৭২ ও ৭৩ নম্বর দাগে ১০ শতাংশ জমির ওপর পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয়তলা বাড়ি। একই মৌজায় ৩১২ নম্বর দাগে ১০ তলা ফাউন্ডেশনে নির্মিত ছয়তলা ভবন। রসুলবাগে সাড়ে আট কাঠা জমির ওপর সাততলা ভবন ও সিদ্ধিরগঞ্জ মৌজায় ১০ শতাংশ জমির ওপর সাততলা ভবন। এ ছাড়া নূর হোসেনকে যে ১১টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সেগুলোতে তাকে দেশে ফেরত আনার আগেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে সাত খুনের ঘটনায় করা দুটি মামলাও রয়েছে। বাকি নয়টি মামলার মধ্যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে করা মামলায় তার বিরুদ্ধে এক বছরের সাজা ঘোষণা করেন আদালত।

বাড়িতে পুলিশের বিশেষ অভিযান : সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেন ও তার ভাতিজা কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের বাড়িতে পুলিশের যৌথ অভিযান চালানো হয়েছে। গতকাল বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল টেকপাড়ায় নূর হোসেন ও তার ভাতিজা ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাদলের বাড়িসহ বিভিন্ন বাড়িতে এ অভিযান চালানো হয়। তবে অভিযানে কাউকে আটক করেত পারেনি পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (ক-অঞ্চল) মো. ফোরকান সিকদারের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, জেলা পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান চালায়। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের টেকপাড়ার বাসিন্দা।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মু. সরাফত উল্লাহ জানান, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ গ্রেফতার ও মাদক উদ্ধারে যৌথভাবে এ অভিযান চালানো হয়। তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় খবর এসেছে নূর হোসেনের সহযোগীরা আবার এলাকায় ফিরে এসেছে। তাই তার ও ভাতিজা শাহ জালাল বাদলের বাড়িতে সহযোগীদের গ্রেফতার করতে আমরা অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু তার সহযোগী বা কোনো অপরাধীকে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধিরগঞ্জে নতুন করে কোনো নূর হোসেনের প্রেতাত্মা সৃষ্টি হতে দেব না। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে এমন কাউকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেব না।’ পরে পুলিশ সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মতিন মাস্টারের ভাতিজা সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নজরুল ইসলামের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। ওসি জানান, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর