মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

গাং টিটির দেখা মিলল পঞ্চগড়ে

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

গাং টিটির দেখা মিলল পঞ্চগড়ে

হঠাৎ করেই মহাবিপন্ন পাখি ‘গাং টিটি’ পঞ্চগড়ে ফিরতে শুরু করেছে। দুই বছর আগেও চোখে পড়েনি এ পাখি। তবে এক দশক আগে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াত এ পাখি। তারপর হঠাৎই হারিয়ে গিয়েছিল। পঞ্চগড়ের পাখি পর্যবেক্ষক ও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবা জানিয়েছেন,  গাং টিটি আবার পঞ্চগড়ের নদীগুলোয় ফিরে আসছে। দেশের অন্য নদীর চরগুলোয় বসবাস এবং নগরায়ণ শুরু হওয়ায় এ অঞ্চলের নদীগুলোকে এরা এখন নিরাপদ ভাবছে। গাং টিটির ভালো নাম নদী টিটি। নদীতেই এ পাখির বিচরণ বলে নাম হয়েছে নদী টিটি। যেহেতু নদীর আরেক নাম গাং, তাই গাং টিটি নামেও এ পাখিকে সবাই চেনেন। গাং টিটির ইংরেজি নাম River Lapwing ev Spur-winged Lapwing
। ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, গাং টিটি নদী ও খাঁড়ির বালুতট এবং নুড়িসমৃদ্ধ এলাকায় বাস করে। পঞ্চগড়ের নদীগুলোয় হিমালয় থেকে বালির সঙ্গে ভেসে আসে নুড়ি পাথর। গাং টিটি নুড়ি পাথর, বালি দিয়ে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। নুড়ি পাথর আর গাং টিটির জলপাই রঙের ডিম মিলেমিশে ছদ্মবেশের আবহ তৈরি করে। শত্রুর হাত থেকে এভাবেই তারা ডিম রক্ষা করে। শত্রুকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য আরেকটি মজার কাণ্ড করে এ পাখি। নিজেদের বাসার আশপাশে মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর উপস্থিতি টের পেলে তারা বাসা ছেড়ে অন্য স্থানে গিয়ে জোরে জোরে ডাকাডাকি করে, যাতে ওই প্রাণীটি বুঝতে পারে তার বাসাটি ওখানে।

আরও জানা যায়, স্ত্রী গাং টিটি তিন-চারটি জলপাই রঙের ডিম পাড়ে। ২২-২৪ দিনে বাচ্চা ফোটে। পা ও ঠোঁট ছাড়া সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো দেখতে একদম ডিমের রঙের মতোই মনে হয়। ডিম থেকে বের হয়ে ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই বাচ্চারা মা-বাবার সঙ্গে বাসা ছেড়ে হাঁটা দেয়। খাবারের অন্বেষণ শুরু করে। গায়ের রঙের জন্য এরা সহজেই পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। বিপদের গন্ধ পেয়ে বা মা-বাবার সংকেত পেলে মুহূর্তের মধ্যেই বাচ্চারা মাটির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এরা একাকী, জোড়ায় জোড়ায় অথবা পাঁচ-ছয়টি মিলে ছোট ছোট ঝাঁকে বিচরণ করে। চমৎকার ভঙ্গিতে হেঁটে হেঁটে ঠোঁট দিয়ে খাবার খায়। বালির মধ্যে মুখ ডুবিয়ে এদের খাবার খোঁজার দৃশ্য দারুণ। কীটপতঙ্গ, ছোট ব্যাঙ ও ব্যাঙাচি, কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী খায়। ভোরবেলা ও সন্ধ্যার আগে এবং চাঁদনি রাতে বেশ সক্রিয় থাকে এরা। এ অঞ্চলের মানুষ মনে করে এ পাখি হা টি টি টি - হা টি টি টি বলে ডাকে। নদী টিটি পায়রা আকারের পাখি। লম্বায় ২৯-৩২ সেন্টিমিটার। ওজন ১৬০-১৬৫ গ্রাম। পিঠের রং বেলে-বাদামি। মাথার খোঁপা, মাথা, ঘাড়, মুখমণ্ডল ঠোঁট ও বুকের ওপরের অংশ কালো। বুক ধূসর-বাদামি। পেট সাদা ও পেটের মাঝখানটা কালো। লেজের শেষ প্রান্ত, পা, আঙুল ও নখ কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম হলেও আকারে পুরুষগুলো খানিকটা বড় হয়। বাচ্চাদের মাথায় সাদা ফোঁটা এবং পিঠে হলুদ ও গাঢ় দাগ থাকে। মার্চ থেকে জুন এদের প্রজনন মৌসুম। এক যুগ আগেও সারা দেশের নদীগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলত নদী টিটির। বর্তমানে তাদের দেখা পাওয়া বিরল ঘটনা। সারা বিশ্বে পাখিটিকে মহাবিপন্ন হিসেবে ধরা হয়েছে। নদীর চরে বসবাস, চাষাবাদ ও অপরিকল্পিত নগর গড়ে ওঠায় প্রতি বছর এদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। কয়েক বছর আগে পদ্মা-যমুনায় টিটির ওপর এক বিশেষ শুমারি হয়েছে। তাতে ব্যাপকহারে নদী টিটির কমে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর