ফিফা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ফুটবল দল এখন ঢাকায়। দলটিকে বহন করা বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইট গতকাল রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। ফুটবল খেলাকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামসহ রাজধানীতে ৮ হাজার পুলিশ ও র্যাবের চার স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর সবর্ত্রই চলছে গোয়েন্দা নজরদারি। কোনো খেলাকে কেন্দ্র করে এমন নিরাপত্তাবেষ্টনী কখনো দেখা যায়নি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে গত সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল সফর স্থগিত করে দেওয়ার পর ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি খুন হন। এতে করে দেশটির ফুটবল দলের আসা নিয়েও সংশয় দেখা দেয়। সরকারও বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ফিফার কর্মকর্তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ঢাকায় এসে নিরাপত্তা পরিকল্পনা দেখে সন্তোষের কথা জানান ফুটবল ফেডারেশন অস্ট্রেলিয়ার (এফএফএ) দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তা। ফিফা ও এএফসির তালিকাভুক্ত নিরাপত্তা কর্মী ডিআইজি শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান গতকাল জানান, নিয়মানুযায়ী যে নিরাপত্তা একটি ফিফা ভুক্ত দলকে দেওয়া হয়, অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও একই থাকছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে প্রীতি ম্যাচ খেলতে আসা আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়াকে যে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তাকে তুলনা করতে পারেন। তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়ার জন্য বিমানবন্দরে দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রথম স্তরের আওতায় বিমানবন্দরের ভিতরে থাকবে এপিবিএন আর বাইরে থাকবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিরাপত্তা কর্মীরা। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে দলটিকে চার স্তরের নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আর হোটেল পর্যন্ত বিভিন্ন মোড়ে থাকবে সাদা পোশাকের নিরাপত্তা দল। একই নিরাপত্তা বজায় থাকবে হোটেল থেকে ভেন্যু ও দেশ ছাড়ার সময় বিমানবন্দরে যাওয়া পর্যন্ত। পাশাপাশি তাদের চলাচলের সময় থাকবে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা। খেলা চলার সময় পুরো স্টেডিয়ামই মুড়ে দেওয়া হবে নিরাপত্তার চাদরে। স্টেডিয়ামে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা; মাঠের ভিতরের নিরাপত্তা, গ্যালারির নিরাপত্তা, স্টেডিয়ামের ভিতরের গেট ও বাইরের গেট, যেখানে থাকবে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাঠের আশপাশের বড় ভবনগুলোতেও সতর্ক অবস্থান নেবে সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তার চাদর থেকে বাদ পড়বে না দর্শকরাও। ম্যাচ শুরুর তিন ঘণ্টা আগে গেট খোলা হবে। সবাইকে টিকিট ও বৈধ পাস নিয়ে আসতে হবে। মাঠে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা কর্মীরা নিরাপত্তা তল্লাশি চালাবেন। দর্শকরা মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। কোনো ব্যাগ, পানির বোতল, ছুরি কিংবা ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আজ শুধু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ঘিরেই সাড়ে চার হাজার পুলিশ ও ৫০০ র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। বিকাল থেকেই আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। আশপাশের বহুতল ভবনের ছাদে গতকাল থেকেই অবস্থান নিয়েছে নিরাপত্তা কর্মীরা। খেলা উপলক্ষে পুলিশের বিশেষ ইউনিট সোয়াত টিমের সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গতকাল থেকেই পুরো স্টেডিয়াম ও তার আশপাশ এলাকা নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ঘিরে ফেলা হয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকার দোকানপাট এবং সব ধরনের যানবাহন চলাচল ছিল বন্ধ। আজও দোকানপাট থাকবে বন্ধ। ২৪ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত এই সফরে এসে সকারুরা আজ বিকাল সাড়ে ৫টায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের অ্যাওয়ে ম্যাচে মুখোমুখি হবে।