বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বেনাপোলে কমেছে আমদানি বেড়েছে চোরাচালান

বকুল মাহবুব, বেনাপোল

বেনাপোলে কমেছে আমদানি বেড়েছে চোরাচালান

শুল্কমূল্য বৃদ্ধি আতঙ্কে বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক আমদানিকারক। কয়েক মাস আগেও এ বন্দরে রাজস্ব আদায়ের হার ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নাজুক পরিস্থিতির। আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের শুল্কমূল্য দফায় দফায় বাড়ানো এবং কারণে অকারণে জরিমানা আদায় করায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমদানিকারকদের তৈরি হয়েছে দূরত্বের। সেই সঙ্গে পণ্য ছাড়াতে সময়ও লাগছে বেশি। ফলে অনেক ব্যবসায়ীই এখন মংলা, সোনামসজিদ ও ভোমরা বন্দর ব্যবহারের  দিকে ঝুঁকছেন। বেনাপোলে একদিকে যেমন আমদানি কমছে, অন্যদিকে সংলগ্ন সীমান্তে বেড়ে গেছে চোরাচালান। কাস্টমস সূত্র জানায়, গত চার মাসে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। প্রতিদিন ঘাটতি বাড়তে থাকলেও তা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বন্দরে হয়রানি এখন নিত্যদিনকার ঘটনা। সে কারণেই তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তারা বলছেন, দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল। আগে এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন আমদানি হতো প্রায় ৫০০ ট্রাক মালামাল। বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বেনাপোল বন্দরের চিরচেনা ফেব্রিক্স, শাড়ি, থ্রিপিচ, ইমিটেশন, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, প্লাস্টিকস স্যান্ডেল, মোটর পার্টস, থ্রি-হুইলার, টু-হুইলার গাড়ি ছাড়াও নানা ধরনের কেমিক্যালজাতীয় উচ্চ শুল্কহারের পণ্যের বেশিরভাগই এখন আমদানি হয় মংলা বন্দর দিয়ে। বিভিন্ন ধরনের ফল, পিয়াজ, চাল, মাছসহ পচনশীল পণ্য চলে গেছে ভোমরা ও সোনামসজিদ বন্দরে। বেনাপোল কাস্টমসের সঙ্গে অন্য সব শুল্ক স্টেশনের অভিন্ন মূল্যে শুল্কায়ন না হওয়ায় আমদানিকারকরা অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যুথী ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক পিয়ারুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও বেনাপোল দিয়ে সব ধরনের মালামাল দুই দিনে ছাড় নেওয়া যেত। এখন লাগে কমপক্ষে ১০ দিন। শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বাড়াবাড়ির কারণে কোনো কোনো পণ্য ৩০ দিনেও ছাড় হচ্ছে না। অতিরিক্ত শুল্কায়নের ফলে পণ্য ছাড়িয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। বৈধভাবে পণ্য এনে লোকসান গোনার যুক্তি নেই। এ কারণে চোরাচালানও বেড়ে গেছে।’ বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুজ্জামান বলেন, ‘বন্দরটিকে ধ্বংস করতে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কাস্টমস কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি এবং ইচ্ছেমতো এইসএস কোড পরিবর্তন করছেন। বর্তমানে এখানে যেসব কর্মকর্তা কর্মরত, তাদের অধিকাংশই আগে ভ্যাট বিভাগে চাকরি করতেন। রাজস্ব কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে তাদের ধারণা কম। সবমিলিয়ে বেনাপোলের পরিবেশ আর ব্যবসাবান্ধব নেই। তাছাড়া বেনাপোলে রয়েছে ভারতের সঙ্গে বিশাল সীমান্ত এলাকা যা পুরোপুরি রক্ষিত নয়। চোরাকারবারিরা এসব সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পণ্য আনছে। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।’ বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, ‘আগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ ট্রাক মালামাল পরিবহন হতো। কাস্টমস কর্মকর্তাদের হয়রানির কারণে তা অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে।’ কাস্টমস কমিশনার এ এফ এম আবদুল্লাহ খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন বন্ধের কারণে ভারত থেকে মালামাল আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কিছুটা নিচে। তবে ঘাটতি রাজস্ব আদায়ে আমরা সচেষ্ট আছি। আশা করছি পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

সর্বশেষ খবর