বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাজধানীজুড়ে তীব্র গ্যাস সংকট

ঘরের রান্না বন্ধ, সমস্যায় শিল্প কারখানা

জিন্নাতুন নূর

রাজধানীজুড়ে তীব্র গ্যাস সংকট

শীত না আসতেই রাজধানীজুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। এ কারণে গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগে জানা যায়, ঢাকার কিছু এলাকায় সকালে গ্যাস থাকলেও দুপুর হতেই গ্যাসের চাপ একেবারে কমে যায়। আবার কিছু এলাকায় সকালে গিয়ে গ্যাস রাতেও আসছে না। কোনো কোনো এলাকায় গভীর রাতে গ্যাস এলেও রাত পোহানোর আগেই চলে যায়। উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে বেশ কিছু এলাকার ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস ও কেজিডিসিএলসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির অফিস ঘেরাও করছেন। গ্যাসের অভাবে গৃহস্থালি কাজকর্ম একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে শিল্প-কারখানার উৎপাদনও লাটে উঠছে। শিল্প মালিকদের অভিযোগ, ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ছোট কারখানাগুলো এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাফ জবাব, শিগগিরই এই সংকটের সমাধান মিলছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্যাস সংকটের কারণে রান্নাবান্নার কাজ ব্যাহত হওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষজন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বা রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়িতে খাবার এনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। আর গৃহিণীদের কেউ কেউ ভোররাতে উঠে কিংবা রাতজেগে প্রয়োজনীয় রান্নাবান্না সারছেন। অনেকে আবার তিনবেলার খাবার একসঙ্গে রান্না করছেন। কেউ কেউ একসঙ্গে তিন-চার দিনের খাবার রান্না করে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করছেন। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অনেকে রাইস কুকার, ওভেন ও মাটির চুলা ইত্যাদিতে রান্নার কাজ সারছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তারা গ্যাস সংকটে ভুগছেন। তারা জানান, ক্ষেত্র বিশেষে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আবার কোথাও বিকাল ৩টা পর্যন্ত গ্যাসের দেখা মিলছে না। আবার কিছু এলাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গ্যাসের দেখা মিলছে না। বিভিন্ন এলাকার মধ্যে রামপুরা, বনশ্রী, ওয়ারী, গোপীবাগ, গেণ্ডারিয়া, কমলাপুর, ইস্কাটন, নাখালপাড়া, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, গাবতলী, কল্যাণপুর, মিরপুর, জিগাতলা, শেওড়াপাড়া, ধানমন্ডি, দক্ষিণ মুগদা, যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাজার, রূপনগর, পল্লবী, মাদারটেক, দক্ষিণখান, আশকোনা ও কামরাঙ্গীরচরে গ্যাস সংকট তীব্র। আর শিল্পাঞ্চলের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং চট্টগ্রামেও গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। কল্যাণপুরের গৃহিণী রিনা আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। এরপর সামান্য গ্যাস এলেও তা দিয়ে রান্না করতে সময় লাগে। তিনি জানান, সমস্যা এতই তীব্র হয়ে উঠেছে যে, এখন তিনি বাসার ছাদে মাটির চুলায় কাঠ পুড়িয়ে রান্না করছেন। মিরপুর পল্লবী এলাকার বাসিন্দা সানজিদা বলেন, বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ এতই কম থাকে যে রান্না করতে কষ্ট হয়। এ জন্য আমরা ভোর থেকেই রান্নার কাজ শুরু করি। আশকোনার গৃহিণী বিবি তাহেরা জানান, সারা দিন গ্যাস থাকে না। রাত সাড়ে ১১টার পর এলেও ভোর হওয়ার আগেই চলে যায়। এ পরিস্থিতিতে রাতজেগে রান্নার কাজ সারতে হয়। বাসায় মেহমান এলে রাইস কুকার ব্যবহার করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশব্যাপী তীব্র গ্যাস সংকটের মুখে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিকতা কি?

এদিকে রাজধানীর শেওড়াপাড়ার একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বিক্রেতা জানান, গ্যাস সংকটের কারণে তাদের রাইস কুকারের বিক্রি বেড়ে গেছে। শীত আসায় গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ায় গ্রাহকদের অনেকেই এখন রাইস কুকার কিনছেন।

তিতাস সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর গ্রাহকদের ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সংস্থাটির মতে, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের উৎপাদন কম হওয়া, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানাসহ নতুন শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করায় গ্যাসের ঘাটতি হচ্ছে। সরকার নতুন সাড়ে তিনশ শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ, বিবিয়ানা-২ বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঘোড়াশাল ও পলাশ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহের কারণে তিতাস এলাকায় প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। 

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ডাইরেক্টর অপারেশন ইঞ্জিনিয়ার এইচ এম আলী আশরাফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকায় যেসব এলাকায় বাড়িঘর বেশি সেখানে পাইপলাইন সংকুচিত হওয়ায় চাহিদার বেশি গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তবে সব এলাকায় এই সমস্যা নেই। যেসব এলাকায় গ্যাস সংকট আছে তা সমাধানের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। তবে এই সমস্যা শিগগিরই শেষ হবে না বলেও তিনি জানান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্যাসের অভাবে প্রতিদিনই কয়েক ঘণ্টা করে কারখানা বন্ধ রাখছেন মালিকরা। এতে তাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ। গ্যাস সংকটের কারণে ছোট-মাঝারি বিভিন্ন কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার কাছেই সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়ায় গ্যাসের চাপ কম থাকায় তৈরি পোশাক কারখানা, স্টিল, রি-রোলিংসহ বিভিন্ন কারখানা এখন ধুঁকছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, দেশে গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। অন্যদিকে উৎপাদন না বাড়লেও গ্রাহকদের চাহিদা বাড়ছে। তাদের মতে, নতুন কোনো গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় পুরনো পাইপলাইন দিয়ে চাহিদার অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ কম পাওয়া যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর