শিরোনাম
রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিশ্বে মাথা উঁচু করে থাকব

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বে মাথা উঁচু করে থাকব

সশস্ত্র বাহিনী দিবসে গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তাদের জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পেরেছে। এ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আমাদের সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে এবং আমরা তা নিচ্ছিও। গতকাল সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ঢাকা সেনানিবাসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সব খাতে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্য অর্জনের কথা তুলে ধরে আরও বলেন, বাঙালি একটি বিজয়ী জাতি। স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা সর্বদা বিশ্বে মাথা উঁচু রেখে সামনে এগিয়ে যাব। মাথা উঁচু করে থাকব। কারও কাছে মাথা নত করব না। এ উপলক্ষে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে সঙ্গে নিয়ে সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ চত্বরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাত বীরশ্রেষ্ঠসহ ৭০ জন বীরউত্তম ও বীরবিক্রম এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের হাতে সম্মানীর চেক ও উপহার তুলে দেন। এ ছাড়া ২০১৪-১৫ সালে সশস্ত্র বাহিনীর শান্তিকালীন সেনা/নৌ/বিমান বাহিনী পদক এবং অসামান্য সেবা পদকপ্রাপ্ত সদস্যদের পদক দেন প্রধানমন্ত্রী।

সকালের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে যা কিছু প্রয়োজন, তা করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ যাতে রোধ করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিকালে সেনাকুঞ্জে অপর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ উদ্ধার তৎপরতা ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দেশপ্রেমের বিরাট উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উচ্চ আদালতের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানরা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শীর্ষস্থানীয় পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বিকাল ৪টার দিকে সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে তিন বাহিনীর প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার তাকে স্বাগত জানান। সরকারপ্রধান অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়ালে বাদ্যযন্ত্রে জাতীয় সংগীতের সুর তোলা হয়। বক্তব্য দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল একটি দক্ষ ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে দেশে-বিদেশে উন্নততর প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধসরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করার প্রয়াস অব্যাহত আছে। তিনি অবকাঠামো নির্মাণ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, সিলেট ও কক্সবাজারের রামুতে সেনাবাহিনীর পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও একটি পূর্ণাঙ্গ ডিভিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উন্নত চিকি?ৎসা এবং তাদের আবাসন সমস্যা সমাধানে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ চত্বরের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম। এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আবু এসরার, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব এম এ হান্নান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শিখা অনির্বাণে শ্রদ্ধাঞ্জলি : সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সকালে শিখা অনির্বাণে পৌঁছালে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং সরকারপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধানরা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় অভিবাদন জানায়। পরে রাষ্ট্রপতি শিখা অনির্বাণ চত্বরে রাখা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। রাষ্ট্রপতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে শহীদ সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যখন শিখা অনির্বাণে ফুল দেন, তখন বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে ফুল দেন।

অন্যান্য কর্মসূচি : সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করা হয়। ফজরের নামাজের পর দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও বিমান ঘাঁটির মসজিদে দেশ ও সশস্ত্র বাহিনীর অগ্রগতি চেয়ে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সকালে শিখা অনির্বাণে ফুল দেওয়ার পর তিন বাহিনী প্রধানরা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর