শিরোনাম
রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবশেষে চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল বিকাল ৫টা ১৩ মিনিটে তাকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে তিনি বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে এলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী তাকে স্বাগত জানান। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিমানবন্দরের সামনে থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত রাস্তার পাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগানে স্লোগানে তাদের প্রিয় নেত্রীকে অভিসিক্ত করেন। খালেদা জিয়া বের হয়ে আসার আগ পর্যন্ত বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকা ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টিত। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, সোয়াট, এপিবিএন সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে অন্যান্য লোকজনের উপস্থিতি ছিল একেবারেই নগণ্য। কাউকেই বিমানবন্দর ও তার আশপাশের এলাকায় দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। বিএনপির সিনিয়র নেতাদেরও গাড়ি থেকে নামতে না দিয়ে উত্তরার দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি জলকামান ও রায়ট কার প্রস্তুত রাখা হয় বিমানবন্দরের সামনের রাস্তার দুই পাশে। খালেদা জিয়াকে বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দর মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে কাকলী মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারের সব বাতি নিভিয়ে রাখা হয়। গণমাধ্যম কর্মীদেরও বিমানবন্দরের সামনে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। বিমানের যাত্রীদের টিকিট দেখে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। শেষের দিকে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় টিকিটধারী কোনো সাধারণ যাত্রীকেও ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এ সময় একজন সাদা চামড়ার বিদেশি নাগরিককে পুলিশি বাধা ও হয়রানির মুখে সেখানে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায়। দফায় দফায় লাঠিচার্জ করা হয় বিমানবন্দরের সামনের রাস্তার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দাঁড়িয়ে থাকা নারী-পুরুষ নেতা-কর্মীদের ওপর। এমনকি এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনের ভিতরে গিয়েও দুবার নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়। এ সময় সাধারণ রেলযাত্রীরাও সেখানে পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হন বলে অভিযোগ করা হয় বিএনপি মহল থেকে।

এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের যা যা করা দরকার, তার সবই আমরা করছি। ‘জনগণ, সরকার নাকি বেগম খালেদা জিয়া- কার নিরাপত্তার স্বার্থে আপনারা এসব করছেন?’ এ প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে তিনি অন্যদিকে চলে যান। কিন্তু খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে সামনের রাস্তায় আসার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যেই পূর্বদিকে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশন, রেললাইন, রাস্তার পশ্চিম পাশের গাছপালা, ঝোপঝাড়সহ চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাস্তার দুই পাশে এসে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পড়েন। পুলিশ চেষ্টা করেও তখন আর নেতা-কর্মীদের আটকিয়ে রাখতে পারেনি। পুলিশের বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আগে থেকেই ঘোষিত বিষয় এটি। বিএনপি চেয়ারপারসন আজ দেশে ফিরবেন। কিন্তু কোনো নেতা-কর্মীকে এয়ারপোর্ট ও তার আশপাশের রাস্তায় দাঁড়াতে পর্যন্তও দেওয়া হচ্ছে না। বাধা দেওয়া হচ্ছে সিনিয়র নেতাদেরও। সিনিয়র নেতারা ভিতরে ঢুকতে চাইলে তাদের গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হয়। তারপরও কেউ কেউ ভিতরে যেতে চাইলে তাদের ঠেলে ধাক্কা দিয়ে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এসবই যখন করবে, তাহলে আমাদের ঘর থেকে বের হতে না দিলেই হয়। এ সময় তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আস্তে আস্তে বলতে শোনা যায় যে, ‘অপেক্ষা করুন, সেদিন বেশি দূরে নয়’। এখন এখান থেকে চলে যান। এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, হাজার হাজার নেতা-কর্মী এসেছিলেন বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে। কিন্তু বিমানবন্দরের ভিতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া তো দূরের কথা, আশপাশেও কাউকে দাঁড়াতে পর্যন্ত দেয়নি পুলিশ। এতে প্রমাণ হয়েছে যে দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই।  এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত কাজে নিয়োজিত যে পাঁচজন স্টাফ বিমানবন্দরের ভিতরে প্রবেশ করার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আসেন তারা হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি কর্মকর্তা লে. কর্নেল অব. আবদুল মজিদ, প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান, গুলশান অফিসের নির্বাহী কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার জসিমউদ্দিন ও চেয়ারপারসনের বাসভবনের সহকারী মো. ইউনূস। এ ছাড়া বিমানবন্দরের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানানো সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বেগম সেলিমা রহমান, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, মীর মোহাম্মদ নাসির, যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফজলুল হক মিলন, মুজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, গোলাম আকবর খন্দকার, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জয়নুল আবদিন ফারুক, দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন, মহিলা দল সভাপতি নুরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, রাবেয়া সিরাজ, শামীমুর রহমান শামীম, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, আহমেদ আজম খান, খায়রুল কবীর খোকন, রফিক শিকদার, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।  রাস্তার দুই ধারের নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনায় সিক্ত হয়ে ধীরে ধীরে গাড়িবহর নিয়ে গুলশানের বাসভবনের দিকে এগিয়ে যান খালেদা জিয়া এবং সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে তিনি তার গুলশানের বাসভবনে পৌঁছান। প্রসঙ্গত, বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। দুই মাসেরও বেশি সময় পর তিনি গতকাল দেশে ফিরেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর