শিরোনাম
রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকরকে ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নেওয়া হয়েছে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হুইসেল বাজিয়ে রাস্তায় টহলে নেমেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। বিশেষ টহলে রয়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং পুলিশ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র। এদিকে গতকাল বিকাল থেকে রাজধানীর রাস্তায় যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল কমে যায়। সন্ধ্যার পর থেকেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। নিজস্ব নিরাপত্তা বিবেচনায় সাধারণ মানুষ দ্রুত বাইরের কাজ শেষ করে ঘরে ফিরে যায়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার   করা হয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্ব বিবেচনা করেও অনেক জায়গায় বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতাও। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। একই কথা বলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রায় ঘোষণার পর থেকেই নাশকতা প্রতিরোধে বিশেষ প্রস্তুতি রাখার জন্য র‌্যাবের সবকটি ব্যাটালিয়নকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকেও র‌্যাব সদস্যরা গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে র‌্যাব সদস্যরা প্রস্তুত। গতকাল কারাগারের আশপাশের এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কারাগারের চারদিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আশপাশের রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলাচলের ওপর বিধি নিষেধও আরোপ করা হয়েছে। প্রতিটি রাস্তার মোড়ে বাড়তি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও বস্তুতে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দফায় দফায় তল্লাশি চালানো হয়। অযাচিত ব্যক্তি ও যানবাহন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারের আশপাশে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে বিকাল পৌনে ৫টা থেকেই অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রথম সারিতে ছিল পুলিশ বাহিনী, দ্বিতীয় সারিতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), তৃতীয় সারিতে কারারক্ষী বাহিনী। সাদা পোশাকে তৎপর ছিল বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। কারাগারের আশপাশের সুউচ্চ ভবনের ছাদে গতকাল সকাল থেকেই অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বাইনুকুলারসহ বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নিরাপত্তার বিষয়টি সার্বক্ষণিকভাবে পরখ করে দেখেছেন তারা। কারাগারের ওয়াচ টাওয়ার থেকেও নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন কারারক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। কারা সূত্র জানিয়েছে, ফাঁসির পূর্বে যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়- সে রকম ব্যবস্থাই এখানে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। কারা সূত্র জানায়, দেশের ৬৮টি কারাগারে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা পাঠিয়েছে কারা অধিদফতর। কারারক্ষীদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে দায়িত্বপালন করতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ফাঁসির রায় কার্যকর হলে জামায়াত-শিবির তাদের প্রভাব থাকা জেলাগুলোতে আবারও তাণ্ডব চালাতে পারে। এ জন্য রায় বহাল রাখার ঘোষণার পর পরই যশোর, সাতক্ষীরা, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, পঞ্চগড়, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রামসহ জামায়াত-শিবিরের প্রভাব থাকা জেলাগুলোতে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান চলছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি।  লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কারা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ছিল। তবে বিকাল থেকে তা আরও বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি নানা ধরনের বাড়তি সর্তকতামূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর