সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ওআইসিতে চোখ বাংলাদেশের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা, জঙ্গি হুমকি এবং উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি- এই তিন ইস্যুকে সামনে রেখে বাংলাদেশের চোখ এখন ইসলামিক দেশগুলোর জোট ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-এ। চলতি সপ্তাহেই তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে একত্রিত হতে যাচ্ছেন ইসলামিক দেশগুলোর নেতৃস্থানীয়রা। সেখানে তারা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহায়তা, বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ  বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করবেন। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মনে করছে, আসন্ন ওই অধিবেশনে বাংলাদেশকে শক্তভাবে উপস্থাপনের সুযোগ রয়েছে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আজ-কালের মধ্যে ইস্তাম্বুল যাবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইস্তাম্বুলে আজ থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের ‘কমসেক (স্ট্যান্ডিং কমিটি ফর ইকোনমিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল কো-অপারেশন অব দ্য ওআইসি)’-এর অধিবেশন। ওই অধিবেশনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। সূত্র জানায়, বাণিজ্য সুবিধার ক্ষেত্রে এবারের ‘কমসেক’ অধিবেশন গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা স্থগিত হওয়ার পর ওআইসিভুক্ত উন্নয়নশীল ইসলামী দেশগুলোতে দেশের রপ্তানি খাতের বিকল্প বাজার তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন নীতি-নির্ধারকরা। এ ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল ইসলামী রাষ্ট্রগুলো হতে পারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের অন্যতম বাজার। বিশেষ করে ডি-এইটভুক্ত দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুরস্ক, মিসর ও নাইজেরিয়ার কাছে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে তুরস্কের সমর্থন পেতে দেশটির অর্থনীতি-বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, কমসেক-এর এবারের ৩১তম অধিবেশনে ওআইসির ১০ বছরের কর্মপরিকল্পনা, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সহযোগিতায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানো, যোগাযোগ, পর্যটন, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী বিচারের ইস্যুটি নিয়েও পাকিস্তানসহ ওআইসিভুক্ত একাধিক সদস্য রাষ্ট্রের প্রশ্ন রয়েছে। তবে এই ইস্যুতে কোনো আলোচনা হবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধে যেসব রায় কার্যকর হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে সেসব নিয়ে যাতে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি না হয়, সে লক্ষ্যে অনেক আগে থেকে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ফলে এই ইস্যুতে এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশকে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না বলেই মনে করেন কর্মকর্তারা। তাদের ধারণা, উন্নয়ন এজেন্ডায় যুদ্ধাপরাধ ইস্যু কোনোভাবেই আসতে পারে না। তবে বিশ্বব্যাপী সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হলেও হতে পারে বলে মনে করেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘কমসেক’ সদস্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করলেও প্যারিসে আইএসের হামলার পর চলতি অধিবেশনে বিশ্বব্যাপী জঙ্গি হামলা এবং এ সম্পর্কিত ঝুঁকির বিষয়টি অধিবেশনের এজেন্ডায় না থাকলেও এ ব্যাপারে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন একাধিক দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী। কারণ এ ঝুঁকির কারণে এখন পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি ইসলামী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাও নতুনভাবে ঝুঁকিতে পড়েছে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া, তুরস্কসহ একাধিক সদস্য দেশে হামলার ব্যাপারে ভিডিওবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও জঙ্গি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে বলে এমন একটি হুমকির বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর