সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় বক্তারা

দুর্নীতি দমনের বড় শর্ত সুশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি দমন বা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় শর্ত হলো সুশাসন। দুর্নীতিহীন প্রশাসন না হলে সুশাসন সম্ভব নয়। এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০১৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে গতকাল শপথ গ্রহণ ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুদক  চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান। এতে বক্তব্য রাখেন কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. নাসির উদ্দিন, দুদক সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ। সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, দুর্নীতি বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র সমস্যা। সমাজের পাঁচ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকি ৯৫ শতাংশ মানুষ সচেতন হলেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে বড় কথা হলো সরকারের সদিচ্ছা। সরকার যদি একান্তভাবে দুর্নীতি দমন করতে চায়, তবেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দমন শতভাগ কোনো সমাজেই সম্ভব নয়। তবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দুদকের গত ১০ বছরে যে অগ্রগতি হয়েছে, তাতে আমরা কমিশনের প্রতি আস্থা রাখতে পারি।’

দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কাজে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও রয়েছে। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে এক হাজার ৭৩ জন কাজ করছেন। এর মধ্যে মাত্র ৩০০ জন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের কাজে জড়িত। এত স্বল্পসংখ্যক লোক দিয়ে এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।’ বিশেষ অতিথি দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয় দুর্নীতি লাঘবের জন্য। দাতাগোষ্ঠীর চাপে ওই সময় (২০০৪ সালে) কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু কমিশন গঠন করা হলেও তাকে নির্জীব করে রাখা হয়। দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ডই সে সময় পরিলক্ষিত হয়নি। পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তন আসে। ওই সময় বিরাজনৈতিকীকরণে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবহার করা হয়। এক-এগারোর সময় এতই আইনগত ত্র“টি ছিল যে, সেগুলোর বোঝা এখনো আমাদের টানতে হচ্ছে। আমরা ওই জঞ্জালগুলো দূর করে প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কাছে যে কোনো পরিচয় মুখ্য নয়। আমাদের কাছে অপরাধই মুখ্য।’ তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে যুবক নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কোনো অনুসন্ধানই করেনি তৎকালীন কমিশন। যুবক দ্বারা হাজার হাজার মানুষ প্রতারণার শিকার হলেও একটি মামলাও হয়নি। এ ছাড়া ওই সময় ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লুট হলে তারও মামলা হয়নি। আমরা এসব বিষয়ে অনুসন্ধান ও মামলা করেছি।’

কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের সীমাবদ্ধতা বা ব্যর্থতা যে নেই তা বলা যাবে না। তবে আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি। এ বছরই আমরা ভারতের সিভিআইসহ ১৪২টি দেশের অংশগ্রহণে একটি সভা করেছি। সেখানে পাচার করা অর্থ কীভাবে উদ্ধার করা যায় এবং অর্থ পাচার কীভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থ পাচার বিষয়ে তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলেও আমরা আশ্বাস পেয়েছি।’ এ ছাড়া অনুষ্ঠানে দুদক মহাপরিচালক ড. মো. শামসুল আরেফিন, ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া, জিয়া উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক মো. মইনুল ইসলাম, নিরু শামসুন নাহার, মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীসহ কমিশনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, ২১ নভেম্বর দুদকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ওই দিন সরকারি ছুটি থাকায় গতকাল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়।

সর্বশেষ খবর