মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ধান্ধাবাজ চক্রের নিয়ন্ত্রণে মাদারীপুর হাসপাতাল

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

ধান্ধাবাজ চক্রের নিয়ন্ত্রণে মাদারীপুর হাসপাতাল

মাদারীপুর সদর হাসপাতাল নামেই সরকারি। বাস্তবে এ হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করছে দালাল, রোগী এবং সরকারি সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া চক্রসহ হাজিরা খাতায় সই করে বাণিজ্যিক চেম্বার-ক্লিনিকে ব্যবসা করা ডাক্তার-কর্মচারীরা। তাদের অবাধ রাজত্বে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা প্রত্যাশিত চিকিৎসা-ওষুধপথ্যসহ অন্যান্য সেবা পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, দালালদের হয়রানি, অ্যাম্বুলেন্স সংকটসহ নানা সমস্যার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের চারপাশে গড়ে উঠেছে অনেক বেসরকারি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকেই সময় দিচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

রোগী এবং ওয়াকিবহালদের অনেকেই জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বাগিয়ে এসব ক্লিনিকে নিতে দালাল এবং বাণিজ্যিক ডাক্তারদের কারসাজিতে হাসপাতালে রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি নষ্ট করে রাখা হয়। ফলে রোগীরা বাধ্য হন বেশি টাকা খরচ করে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষ-নিরীক্ষা করাতে। অভিযোগ অনুযায়ী, বিভিন্ন হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সরকারি ডিউটি বাদ দিয়ে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসে ফায়দা হাসিল করছেন। জানা গেছে, মাদারীপুর সদর হাসপাতাল ও গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য নির্মিত মাতৃমঙ্গল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হলেও চিকিৎসক, নার্স না থাকাসহ বিভিন্ন অজুহাতে রোগীদের চিকিৎসাসেবা না দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট কিছু ক্লিনিকে। ওইসব ক্লিনিকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সিজার করে থাকেন। রোগীদের অভিযোগ, গর্ভবতীদের নরমাল ডেলিভারি করা গেলেও টাকা উপার্জনের জন্য সিজার করা হয়।

অভিযোগে আরও জানা গেছে, সকাল ১০টার আগে আউটডোরে ডাক্তারদের দেখা মেলে না। ফলে যেসব রোগী সকালে সেবা নিতে হাসপাতালে আসেন, তাদের ডাক্তারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সালাম মিয়া জানান, ‘চিকিৎসকরা হাজিরা খাতায় সই করতে আসেন, কিন্তু রোগী দেখতে আসেন না।’

এদিকে সিভিল সার্জন অফিস বলছে, ১০০ শয্যার মাদারীপুর সদর হাসপাতালটিতে নানা সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এখানে ২২ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও রয়েছেন ১৩ জন। সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, সিনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক্স, অ্যানেসথেসিয়া, চক্ষু-নাক-কান-গলা মেডিকেল অফিসার, ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার, রেডিওলজিস্ট পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। শূন্য রয়েছে নার্সের ৪টি পদ। এ ছাড়াও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ২২টি পদের বিপরীতে লোক আছে ১৯ জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ৪৫টি পদের মধ্যে লোক আছে ৩৩ জন। অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার সংকটে ঠিকমতো অপারেশন হয় না। মাদারীপুর সিভিল সার্জন দিলীপ কুমার দাস বলেন, ‘হাসপাতাল ১০০ বেডের হলেও সব সময় অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকে। ফলে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়। তবুও সাধ্যমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষার চেষ্টা করা হয়। সকালে অনুপস্থিত ডাক্তারদের শোকজ নোটিস প্রদানসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। হাসপাতালের অবকাঠামো অনেকগুলোই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী সংকট থাকলেও আমরা হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করি। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগেরও চেষ্টা চলছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘আউটডোরে ওষুধের সংকট নেই। সবার সহযোগিতায় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর