বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভবনের বেসমেন্টে বাণিজ্য বন্ধ

সব অবৈধ প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত

নিজামুল হক বিপুল

রাজধানীর আবাসিক এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাখা বেসমেন্টে গড়ে ওঠা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলবে সরকার। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক ভবনগুলোর বেসমেন্টে গড়ে ওঠা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও উচ্ছেদ করে গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। এর পাশাপাশি বাসাবাড়ি নির্মাণের জন্য ফুটপাথ বা রাস্তা দখল করে যেসব র‌্যাম্প গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলোও ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। চলতি সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অবৈধ এসব স্থাপনা উচ্ছেদে শিগগির অভিযান শুরু করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এ জন্য রাজউক চেয়ারম্যানকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট  সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত কয়েক বছরে রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোতে ভবনের বেসমেন্টে ব্যাপকহারে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকায় আবাসিক ভবনের নিচে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাখা নির্দিষ্ট স্থানে ও বেসমেন্টে গড়ে তোলা হয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোর, রেস্টুরেন্ট, বিদ্যালয়সহ বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যেগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনুমোদনহীন। আবাসিক ভবনে থাকা গাড়িগুলো পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে পার্কিং না করে পাশের বা সামনের সড়কেই পার্কিং করে। রাস্তার দুই পাশে পার্কিং করার ফলে আবাসিক এলাকাগুলোতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকার বাসিন্দাদের এবং এ জন্য সে এলাকায় চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। শুধু আবাসিক এলাকায়ই নয়, একইভাবে রাজধানীর অন্যান্য স্থানে বাণিজ্যিক ভবনের বেসমেন্টে গাড়ি পার্কিংয়ের বদলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব বাণিজ্যিক ভবনে আসা ক্রেতাদের তাদের যানবাহন রাস্তায় পার্কিং করে তবেই কেনাকাটা করতে হয়। যার ফলে গুলশানের মতো এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজধানীর যানজটের একটা প্রধান কারণ হচ্ছে বাণিজ্যিক ভবনগুলোর গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। আর আবাসিক এলাকায় আবাসিক ভবনের নিচে পার্কিং বাদ দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। আমরা এগুলো উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগির এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। তাহলে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের বেসমেন্টে পার্কিং বদলে যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ বিষয়ে ২২ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানদের নিয়ে এ বৈঠক করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এ সভায়ই সিদ্ধান্ত হয় শিগগির এসব স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে। বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, ধানমন্ডি, বারিধারা, গুলশান, বনানী ও উত্তরার যেসব আবাসিক ভবনের নিচে বড় বড় সুপার শপ গড়ে উঠেছে সেগুলো উচ্ছেদ করে পার্কিং স্থানগুলো গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে যেসব বাণিজ্যিক ভবনের বেসমেন্ট গাড়ি পার্কিং না করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোও উচ্ছেদ করা হবে। সেই সঙ্গে বাসাবাড়ি বা ভবন নির্মাণের সময় ফুটপাথ বা রাস্তাজুড়ে নির্মাণ করা র‌্যাম্পও ভেঙে ফেলা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ধানমন্ডি, বনানী, বারিধারা, গুলশান ও উত্তরার মতো আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো শিগগির উচ্ছেদ করতে অভিযান শুরু করবে রাজউক। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে রাজউককে সহযোগিতা করবে। তিনি জানান, এ ব্যাপারে রাজউকের চেয়ারম্যানকে চেয়ারম্যান করে এবং ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কো-চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা শিগগির বৈঠক করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র আরও জানান, যেসব বাণিজ্যিক ভবনের বেসমেন্টে পার্কিংয়ের বদলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলো ভেঙে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সময় রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে গাড়ি ওঠানোর জন্য যেসব র‌্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উচ্ছেদ করা হবে। কারণ ফুটপাথ দখল হয়ে যাওয়ায় পথচারীরা চলাচল করতে পারছেন না। আবার কোথাও কোথাও রাস্তাজুড়ে র‌্যাম্প নির্মাণ করায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে। বৈঠকসূত্রে আরও জানা গেছে, প্রথম ধাপে বেসমেন্ট ও পার্কিং স্থানে গড়ে তোলা অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের পর দ্বিতীয় ধাপে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্ট, গেস্টহাউস, স্পা, ম্যাসাজ পারলার ও অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা স্কুল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভাসূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশনেও একইভাবে অভিযান চালাবে চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহীতে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং খুলনায় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ খবর