শিরোনাম
শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জায়গাস্বল্পতায় আমদানি রপ্তানিতে নিত্য সমস্যা

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, হিলি থেকে ফিরে

জায়গাস্বল্পতায় আমদানি রপ্তানিতে নিত্য সমস্যা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর ও উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিলি স্থলবন্দরের পরিচালনাকারী পানামা হিলি পোর্ট। এখানে জায়গা-স্বল্পতার কারণে আমদানি-রপ্তানিতে সমস্যা যেন লেগেই থাকে। দিন যত যাচ্ছে বন্দরের কার্যক্রমের পাশাপাশি এর চাহিদাও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু শুরুর দিকে যেটুকু জমিতে পানামা পোর্ট চালু হয়, এখন তাতে আর কুলাচ্ছে না। এই স্বল্প জায়গায় ব্যাঘাত ঘটছে পোর্টের কার্যক্রমে। দিন দিন এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। এতে হিলি স্থলবন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব আদায় থেকে।

বর্তমানে হিলি স্থলবন্দরের ভেতরে ওপেন ইয়ার্ড শেড রয়েছে তিনটি, ওয়্যারহাউস তিনটি, এ ছাড়া আরও একটি নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। তবে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানীকৃত বেশির ভাগ পণ্যই বাংলাদেশি গাড়িতে লোড-আনলোড হয়। ফলে বন্দরে খালি জায়গা বেশি প্রয়োজন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে ২০০৭ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে হিলি শুল্কস্টেশন পরিচালনার জন্য পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেড ২৫ বছরের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। সেই থেকে হিলি শুল্কস্টেশনের বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। শুরুতে ১০ একর  জায়গায় পানামা হিলি পোর্ট লিংকের অবকাঠামোসহ সব স্থাপনা নির্মাণ করে বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তবে দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়তে থাকায় জায়গার চাহিদাও বাড়তে থাকে। ফলে পানামা হিলি পোর্ট লিংক ও বাংলাহিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বন্দরের জায়গা বাড়ানোর জন্য স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে। হিলি শুল্কস্টেশন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৪ আগস্ট হিলি শুল্কস্টেশন কার্যালয়ে রংপুর কাস্টমস হাউসের যুগ্ম-কমিশনার হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা করেন। সেখানেও সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশন আকারে গৃহীত প্রস্তাব ৩(গ) মোতাবেক বন্দরের অতিরিক্ত গেট নির্মাণের কথা এবং বন্দরের জায়গা সম্প্রসারণের কথা বলা হয়। এ রেজুলেশনের কপি পানামা হিলি পোর্ট কর্তৃপক্ষকেও দেওয়া হয়। তাদের দাবিগুলো পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেড কর্তৃপক্ষ যৌক্তিক বলে মনে করে। পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে বন্দর সম্প্রসারণের জন্য আরও ১১.৮৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে তা এখনো পানামা হিলি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ভারত অংশের হিলির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট খোকন সরকার জানান, ভারত থেকে প্রতিদিন ২০০ ট্রাক পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করার একটা টার্গেট নিয়ে রপ্তানি শুরু করলেও সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বন্দরের জায়গা ভর্তি হয়ে যায়। বাকি ট্রাক ঢুকতে বা বেরোতে পারে না। ফলে বন্দর দিয়ে ১০০ থেকে ১২০টি ট্রাকের বেশি পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। এতে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরের জায়গা বাড়ানো হলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। হিলি স্থলবন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক হারুন-উর-রশীদ বলেন, পানামা পোর্টের ভিতর জায়গা স্বল্পতার কারণে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। ফলে ভারত থেকে বেশি পরিমাণ আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। পণ্য লোড-আনলোড করতেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে কাঁচা পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হচ্ছে। সময়মতো গাড়ি বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না, বেরও হতে পারছে না। সঠিক সময়ে বাজার ধরতে না পারায় আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও অপারেশন) এস এম হায়দার জানান, বন্দরে জায়গা কম থাকায় অপারেশন ওয়ার্কে বিঘ্ন ঘটে। এর ফলে বন্দরের ভিতরে ও বাইরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে বন্দরের জায়গা সম্প্রসারণের জন্য ইতিমধ্যে নতুন যে ১১.৮৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সেখানে আরও কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে। বন্দর আরও বেশি গতিশীল হবে।

হিলি স্থলবন্দর শুল্কস্টেশনের সহকারী কমিশনার (এসি) মহিবুর রহমান ভূঞা বলেন, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে বন্দরের রাস্তাঘাট প্রশস্ত করাসহ পোর্ট অভ্যন্তরের জায়গা বৃদ্ধি ও অবকাঠামো নির্মাণ করা আবশ্যক। এতে করে বন্দর দিয়ে একদিকে যেমন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে, তেমনি রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়বে।

সর্বশেষ খবর