শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সারা দেশে নিরাপত্তা আরও জোরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে নিরাপত্তা আরও জোরদার

বগুড়ায় হামলার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শিয়া মসজিদে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ছবিটি গতকাল তোলা -এএফপি

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। কয়েক ধাপের নিরাপত্তা-বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘিরে। নজরদারি বাড়াতে সরকারের সব কটি গোয়েন্দা সংস্থা আগের চেয়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ তথ্য দিয়ে বলেছে, বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলার পর সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঢাকায় ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার ও রংপুরে জাপানের নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা, ঢাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলায় একজনের মৃত্যু এবং আমিনবাজারে দায়িত্বরত  পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা ও নন্দনে কনস্টেবল মুকুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তোলে। এর মধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থা বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়। বৃহস্পতিবার রাতে শিয়া মসজিদে হামলায় একজন নিহত হওয়ার ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রশ্নে আগামী তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ তিন মাস দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিলের কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্রমশ বাড়তে পারে।

সূত্র জানায়, নাশকতা ও হামলার আশঙ্কায় ইতিমধ্যে ঢাকার হজরত শাহজালাল (রহ.), চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানীসহ দেশের সব কটি বিমানবন্দরে হলুদ সতর্কতা বা ইয়েলো অ্যালার্ট জারি রয়েছে। এ ছাড়া রেলওয়ে স্টেশন, সব বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম বন্দর, আদালত ভবন, গুরুত্বপূর্ণ তেল ও গ্যাস স্থাপনা, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, বেতার ভবনসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ৬৮টি কারাগার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সব থানা ও পুলিশফাঁড়িকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের সব শহরে। বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কায় গতকাল সকাল থেকে নতুন করে কিছু পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। যে কোনো সময়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও র‌্যাব ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশের সবগুলো মেট্রোপলিটন এলাকাসহ সব থানার পুলিশ থাকবে স্ট্যান্ডবাই। রাস্তায় রাস্তায় টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। দেশের প্রত্যেক জেলার এসপিদের এ বিষয়ে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ পেয়েছি। কোনোভাবেই যাতে নিজেদের এলাকায় কোনো বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড না ঘটে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশ পেয়েছি।’ রংপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, জেলার শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ ও খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের চার্চগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে একজন নিহত ও তিনজন আহত এবং রংপুরে ১০ জন ফাদারকে চিঠি দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার পর এ ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। গতকাল পুলিশি প্রহরায় শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন মসজিদগুলোতে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীন বলেন, দুর্বৃত্তরা যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে জন্য খ্রিস্টানদের চার্চ ও গির্জা এবং শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাখা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিতে। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের আট উপজেলায় খ্রিস্টানদের ২৮টি চার্চ রয়েছে। এ ছাড়া শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ রয়েছে ২০টি। বুধবার বিকালে বাংলাদেশ আঞ্চলিক ব্যাপ্টিস্ট চার্চ রংপুরের ফাদারের নামে ডাকযোগে চিঠি দিয়ে তাকে এবং জেলার অপর নয়টি চার্চে কর্মরত ফাদারদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। নিরাপত্তা চেয়ে তারা জিডি করেছেন। রংপুর আঞ্চলিক ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পালক প্রধান ফাদার রেভারেন্ড বার্নাবাস হেমরম জানান, ‘বিভিন্ন চার্চে পুলিশ দেওয়া হলেও আতঙ্ক রয়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। সবাইকে নিরাপদে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে।’ এদিকে নগরীর রবার্টসনগঞ্জ এলাকায় শিয়া মসজিদ কমিটির সভাপতি আখলাকুর রহমান বলেন, ‘মহররমের দিন ঢাকায় ইমামবাড়ায় বোমা হামলা এবং বগুড়ার শিবগঞ্জে মসজিদে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের ঘটনায় হতাহতের পর আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারি বাড়িয়েছেন। এর পরও শঙ্কা রয়ে গেছে।’ বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, জেলায় খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের ৪১টি গির্জা, বিদেশিদের চলাচলের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা মংলা বন্দর, ইপিজেড, বিদ্যুৎকেন্দ্র, কারাগার, ষাটগুম্বজ মসজিদ ও হজরত খানজাহান আলী (রহ.)-এর মাজার এলাকায় ফের সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশি নাগরিকদের হত্যা ও গির্জার ফাদারদের হত্যার চেষ্টাসহ সন্ত্রাসীদের নাশকতার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার থেকে এ সতর্কতা জারি করা হয়। এসব এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বাগেরহাটের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের গির্জা ও জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ও বিদেশি নাগরিকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ফের এই সতর্কতা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাগেরহাট গোয়েন্দা পুলিশ। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জানায়, বর্তমানে বাগেরহাটের মংলা বন্দরে পশুর নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং, ইপিজেড, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন এনজিওতে শতাধিক বিদেশি নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। এ জেলার জনগুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা ষাটগুম্বুজ মসজিদ, হজরত খানজাহান আলী (রহ.)-এর মাজার ও সুন্দরবন দেখতে প্রতিদিন অনেক বিদেশি পর্যটক বাগেরহাটে এসে থাকেন। এ ছাড়া জেলায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ৪১টি গির্জা রয়েছে। এর মধ্যে মংলা উপজেলায় ১৯টি, রামপালে ছয়টি, মোল্লাহাটে নয়টি, চিতলমারীতে তিনটি, ফকিরহাটে দুটি ও বাগেরহাট সদরে দুটি গির্জা রয়েছে। এ জেলায় বসবাস করছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রায় ২৫ হাজার লোক। খ্রিস্টানদের এসব গির্জার অধিকাংশ ফাদারই বিদেশি নাগরিক। সাম্প্রতিক সময়ে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা ও পাবনার ঈশ্বরদীতে খ্রিস্টান মিশন গির্জার যাজক লুক সরকারকে সন্ত্রাসীরা গলা কেটে হত্যাচেষ্টার পর বাগেরহাট জেলায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে যাওয়ার পর জেলায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ফের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষাপটে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশ বাগেরহাটে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের ৪১টি গির্জা, বিদেশিদের চলাচলের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা মংলা বন্দর, ইপিজেড, বিদ্যুৎকেন্দ্র, কারাগার, ষাটগুম্বুজ মসজিদ ও হজরত খানজাহান আলী (রহ.)-এর মাজার এলাকায় ফের সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে।

সর্বশেষ খবর