শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

দিনাজপুরের ফুটপাথে ‘ফেলনা আলু’র পসরা

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

দিনাজপুরের ফুটপাথে ‘ফেলনা আলু’র পসরা

আলুর যে অংশ ফেলে দিয়ে আলাদা করা হয় সেই অংশের পসরা জমিয়েছে শিশুরা। এই ফেলনা আলু বিক্রি করে শিশুদের কেউ স্কুলে পড়ার বই-খাতা কিনছে, কেউবা অন্য প্রয়োজন মেটাচ্ছে। ফেলনা আলুকে অনেকে ‘কাটা আলু’ও বলে থাকেন। কেউবা বলেন ‘চোখ আলু’। ফুটপাথে পা দিতেই ওরা ডাকা শুরু করে, ‘আংকেল আমার কাছ থেকে নেন।’ দূর থেকে ভেসে আসে আরও শিশুর কণ্ঠ। গতকালও বীরগঞ্জ পৌর শহরের উল্লাস সিনেমা হল সংলগ্ন সড়কের পাশের ফুটপাথে দেখা যায় একদল শিশু কাটা আলুর পসরা নিয়ে বসেছে, ‘আংকেল আমার কাছ থেকে কিনেন।’ তাদের এমন আকুতি সহজেই আকৃষ্ট করে সাধারণ ক্রেতাদের।

 

দিনাজপুর জেলায় এখন আলু চাষের ধুম চলছে। কৃষকের দম ফেলার সময় নেই। পুরনো ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তারা জোর দিয়েছেন আলু চাষে। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, আলু চাষের সময় ক্ষেতে কৃষি শ্রমিকদের পাশাপাশি শিশুদের বেশ ভিড়। কারণ জানা যায়, কৃষকদের রোপণকৃত আলুর যে অংশ দিয়ে গাছ বের হবে- শুধু সে অংশ কেটে রোপণ করতে হয়। স্থানীয়ভাবে কৃষকদের কাছে এটা আলুর ‘চোখ’ বলে পরিচিত। আর এই কেটে ফেলা আলুর বাকি অংশগুলো শিশুরা কুড়িয়ে নেয়। তারপর সেগুলো বিক্রি করে। জেলার বেশকিছু উপজেলায় এ ঘটনা ঘটছে। কৃষকের ফেলে দেওয়া কাটা আলু বিক্রয় করতে আসা চাকাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বাঁধন, প্রথম শ্রেণির ছাত্র মুরাদ হোসেন, কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী বন্যা, ছাত্র লাবু এবং দেবীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র নাইমসহ ৫ শিশুকে দেখা যায় উল্লাস সিনেমা হল সংলগ্ন সড়কের ফুটপাথে এ আলু বিক্রি করতে। লাবু বলে, ‘আমাদের বাড়ির পাশে অনেক জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আমরা আলুর বীজ বপনের সময় মাঠে গিয়ে ফেলে দেওয়া অংশগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আসি। তারপর এখানে বিক্রি করি। বাজারে আলুর দাম ২০ টাকা কেজি। এখানে আমরা মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। প্রত্যেক দিন ৪ থেকে ৫ কেজি আলু বিক্রি করি। এতে আমি ৪০/৫০ টাকা পাই। এ টাকা দিয়ে বই-খাতা-কলম কিনি।’ বন্যা বলে, ‘আলু বিক্রির টাকা দিয়ে আমি খাতা-কলম কিনব। চুড়ি-ফিতা কিনব। শীতের প্রসাধনীও কিনব।’ নাইম জানায়, আলু বিক্রির টাকা দিয়ে সে ফুটপাথ থেকে ভাপা পিঠা খাবে। কিছু টাকা সে মায়ের কাছে রাখবে। পরে সে টাকা দিয়ে স্থানীয় জিন্দাপীর মেলায় যাবে। সেখানে সার্কাস দেখবে। বাকি টাকা দিয়ে বাড়ির জন্য গুড়ের জিলাপি কিনবে। বাঁধন জানান, ফুটপাথের একটি দোকানে সে জ্যাকেট দেখে রেখেছে। যদি আলু বিক্রি করে অনেক টাকা হয়, তাহলে সে ওই জ্যাকেট কিনবে। ‘কত টাকা হলে সে জ্যাকেটটি কিনতে যাবে’- এমন প্রশ্নে সে লজ্জায় মুখ লুকিয়ে বলে, ‘জানি না’।

সর্বশেষ খবর