রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ব্যস্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে

ইউজিসির প্রতিবেদন

আকতারুজ্জামান

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৪-এ বলা হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই বেশি  সময় ব্যয় করেন। এতে বাড়ছে সেশনজট। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সুপারিশ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেশনজটের কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক সেশন আশঙ্কাজনকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। এতে একদিকে যেমন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অপরদিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের প্রচুর অপচয় হচ্ছে। ফলে মানবসম্পদ উন্নয়নে জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সেশনজট সৃষ্টির সব কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নয় এবং তা নিরসন করাও বিশ্ববিদ্যালয়ের একক কর্তৃত্বাধীন নয়। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, কারিকুলাম বাস্তবায়নের পদ্ধতি, বিশেষ করে পরীক্ষা পদ্ধতি এবং পরীক্ষার ফল প্রকাশে অনাকাক্সিক্ষত বিলম্বও অনেকাংশে সেশনজট তৈরির জন্য দায়ী। পরীক্ষা পদ্ধতি যুগোপযোগী করে একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করলে সেশনজট কমতে পারে। কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন শিক্ষক প্রতি সপ্তাহে কত ঘণ্টা ক্লাস নেবেন- এর নিয়ম থাকলেও অনেকাংশেই এর সঠিক বাস্তবায়ন হয় না। এ ছাড়া এ নিয়মের সঠিক ব্যাখ্যা না থাকার কারণে শিক্ষকরা ক্লাস নেন না যথাযথভাবে। শিক্ষকরা বেশিরভাগ সময় ক্লাসেও উপস্থিত থাকেন না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষসহ শিক্ষকদের অফিস কক্ষও দুপুরের পর তালাবদ্ধ থাকে। তাই শিক্ষার্থীসমাজ এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে শিক্ষকদের সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা জন্মেছে। এ ছাড়া অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে- তারা একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই বেশি সময় ব্যয় করেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কত সময় ব্যয় করতে পারবেন- এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালাও নেই। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন এবং সার্বিক আচরণের ওপর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম বেধে যাওয়ায় অশান্ত হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস। বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়। রাজনৈতিক কারণে সেশনজটের শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। অনেকক্ষেত্রে এসব কারণে চার বছরের সম্মান কোর্স শেষ করতে সাড়ে ছয় বছরের বেশি সময় লাগে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক মানসম্মত শিক্ষক রয়েছেন। তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে পারেন। এক্ষেত্রে রিসোর্স থাকলে তা ব্যবহারে বাধা নেই। তবে প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে- একজন শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কতটি ক্লাস নিতে পারবেন। একজন শিক্ষকের প্রথম দায়িত্ব হলো নিজ বিভাগে ক্লাস নেওয়া। অনেকক্ষেত্রে শিক্ষকরা নিজ বিভাগে সময় না দিয়ে বাইরে ক্লাস নেন বেশি। এমন হওয়া উচিত নয়।’

সর্বশেষ খবর