নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার অবৈধ স্থাপনা। নদীটির পূর্ব-পশ্চিম উভয় পাড়ে ৫২ কিলোমিটার জায়গায় এ অবৈধ স্থাপনার তালিকায় রয়েছে স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ঝুপড়ি বস্তিঘর পর্যন্ত। স্বেচ্ছায় সরে যেতে এই স্থাপনাকারীদের বহুবার লিখিত নোটিস দিয়েও লাভ হয়নি। তাই সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ স্থাপনার তালিকা ধরে দখল উচ্ছেদে নেমেছে। উচ্ছেদে বহুতল ভবন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, বাজার ও পরিবহন স্ট্যান্ডসহ নানা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দখলমুক্ত রাখতে উচ্ছেদকৃত স্থানে নদীর পাড় রক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব স্থাপনা থেকে কতিপয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তির লোকজন মাসে মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের সেন্ট্রাল খেয়াঘাট থেকে শুরু করে সেই সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত নদীর দুই পাড় সম্পূর্ণরূপে দখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের গোডাউন রুম, আধা-পাকা টিনশেড ঘর, বস্তি ও দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ এ নদী পাড় রক্ষায় প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত হয়েছে ৫ সহস াধিক সীমানা নির্ধারণী পিলার; যাতে দখলদাররা পিলারের বাইরে এসে নদীর পাড় দখল করতে না পারে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে রাতের আঁধারে উপড়ে ফেলা হয়েছে সীমান পিলার। ফলে পাড় রক্ষায় সীমানা পিলারই এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। ২০১১ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত টাস্কফোর্সের একটি টিম দুই সহস াধিক পিলার পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৯ সালের জুনে হাইকোর্ট শীতলক্ষ্যা নদীসহ রাজধানী ঢাকার পাশের চারটি নদী রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএকে নির্দেশ দেয়। অদ্যাবধি শীতলক্ষ্যায় সহস াধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হয়। ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল সীমানা নির্ধারণী পিলার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। শীতলক্ষ্যার ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ হাজার ৪১টি পিলার স্থাপনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৮ কোটি ৮৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ওই বছরের ১৬ মে তৎকালীন ভূমি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি পরিদর্শন শেষে নদীর তীর ও ফোরশোরের জায়গাসহ নানা বিষয় বিবেচনা করে শীতলক্ষ্যার পূর্ব তীরে ১৩ শতাধিক ও পশ্চিম তীরে ৭ শতাধিক পিলার তিন মাসের মধ্যে পুনঃস্থাপন করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু নদীর ফোরশোর অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণী পিলার স্থাপনের কথা থাকলেও অধিকাংশ স্থানে নদীর ভিতরই পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এ সুযোগে সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর থেকে শহরজুড়ে পূর্ব-পশ্চিমে শুধু দখল আর দখলে মেতেছে দখলদাররা। বর্তমানে দুই পাড়ে রয়েছে শত শত বস্তিঘর, আধাপাকা ঘর, অফিস কার্যালয়, বাজারসহ নানা স্থাপনা। আর বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান নদীর পাড় দখল করে গোডাউন কক্ষ এমনকি সৌন্দর্যবর্ধনে বারান্দা ও বাগান নির্মাণ করেছে। তবে সম্প্রতি নদীর পাড় রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে মাঠে নেমেছে নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ। গত আগস্টে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, কাঁচপুর, রূপগঞ্জ ও ডেমরায় সুলতানা কামাল সেতুর দুই পাশেই শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবৈধ দখলকৃত জায়গা দখলমুক্ত ও অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালায় বিআইডব্লিউটিএ। এরপর সেখানে বৃক্ষরোপণও করা হয়। এ ছাড়া সেন্ট্রাল খেয়াঘাট-সংলগ্ন এলাকায় টানবাজারে, ৫ নম্বর সারঘাটে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিআইডব্লিউটিএ। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বন্দরের সেন্ট্রাল খেয়াঘাটের পূর্বপাড়ে বন্দর বেবিস্ট্যান্ড, বাজার, ১০ তলা বহুতল ভবনের বর্ধিতাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, যত বাধাই আসুক এ উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ শাখার যুগ্ম-পরিচালক এ কে আরিফউদ্দিন জানান, নদীটির দুই পাড়ে ২৬-২৬ করে ৫২ কিলোমিটার এলাকায় সাড়ে তিন হাজার দখলদার রয়েছে। আমরা এ তালিকা ধরে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।