মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ট্রানজিট দিয়ে মিলবে জলবিদ্যুৎ

বাংলাদেশ-ভুটান সচিব পর্যায়ের বৈঠক আজ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

‘বাংলাদেশ দেবে ট্রানজিট সুবিধা আর ভুটান দেবে জলবিদ্যুৎ’- এমন মানসিকতা নিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর‌্যায়ের বৈঠক আজ ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে। সকাল ১০টায় রাজধানীর ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটে দুই দিনব্যাপী এ বৈঠক শুরু হবে। সূত্র জানায়, ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে আলোচনার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ল্যান্ডলক (স্থলাবদ্ধ) দেশ হিসেবে ট্রানজিট সুবিধায় বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুযোগ চেয়ে আসছে ভুটান। ফলে বৈঠকে এ দুটি ইস্যু সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ভুটান পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের জলপথ ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে। তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহার করে নিজ দেশে এবং তৃতীয় দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে আগ্রহী। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেছেন ভুটানের রাষ্ট্রদূত। এ ছাড়া তারা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও প্রস্তাব পাঠিয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, ভুটানের যেমন ট্রানজিট সুবিধা প্রয়োজন বাংলাদেশের তেমনি বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তাই অন্যান্য বাণিজ্যিক ইস্যুর পাশাপাশি বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ।  এ ছাড়া দেশে প্রতি বছর ১১ থেকে ১২ শতাংশ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। ভুটান বর্তমানে ভারতের সহযোগিতায় ১০টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৬ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। এ পরিস্থিতিতে ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বা দেশটির জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন ও আমদানির বিষয় দুই সচিবের আলোচনার টেবিলে উপরের দিকে ঠাঁই পাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায় বলেন, জলবিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে বাংলাদেশের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে ভুটান ত্রিপক্ষীয় (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত) মেকানিজমের মাধ্যমে তাদের দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে। যেহেতু ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতীয় করিডর ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে। তাই ভারতকে সঙ্গে নিয়েই বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। জানা গেছে, ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে সহায়তার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। বাংলাদেশ-ভারতের বিদ্যুৎ গ্রিড স্থাপনেও সহায়তা করেছে এডিবি। এবার সংস্থাটি ভুটানের সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের ক্রস বর্ডার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন হওয়ায় ভুটান এবং নেপালের সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের এ ধরনের ক্রস বর্ডার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সার্ক বিদ্যুৎ সঞ্চালন সম্পর্ক সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়ছে বলে মনে করছে এডিবি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ট্রানজিট সুবিধা এবং জলবিদ্যুৎ আমদানি ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পণ্যের শুল্ক সুবিধা, বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে এলসি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ, পর্যটন কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ভুটানে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হবে। পণ্যের মানসংক্রান্ত ছাড়পত্র গ্রহণে বিএসটিআই ও ভুটানের ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড সংস্থার (বিএসবি) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ব্যাপারে আলোচনার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ভুটান এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড রেগুলেটরি অথরিটির সঙ্গে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহায়তা নিয়েও আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ব্যাপারে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর