নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নেতাদের অংশগ্রহণে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২১। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন উদ্বোধন হয়। সম্মেলনের শুরুতেই বিশ্বে নেতারা গত ১৩ নভেম্বর প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। তারপর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন। এরপর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বক্তব্য দেন।
ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৮টা। কনকনে শীত। বাতাসের তীব্রতায় শীতের গতিও যেন বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। প্যারিসের আকাশ তখনো অন্ধকার। শহরের সড়কগুলোতে জ্বলছে স্ট্রিট লাইট। গাড়িগুলো হেডলাইট জালিয়ে দিব্বি ছুটে চলছে গন্তব্যে। এরই মধ্যে সম্মেলনকেন্দ্রে যেতে যেতে দেখা গেল বিশ্ব জলাবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে প্যারিসের বিভিন্ন প্রান্তে জড়ো হওয়া অংশগ্রহণকারীরা বাস, ট্রেন, মেট্রোতে করে ছুটছেন সম্মেলন কেন্দ্রের দিকে। সকাল থেকেই সম্মেলন কেন্দ্র প্যারিসের লা বুর্জে এলাকার কয়েক কিলোমিটারজুড়ে নিন্দ্রি নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। বিশ্ব নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন্ধ করে দেওয়া হয় সম্মেলন কেন্দ্রের চারপাশের বেশ কয়েকটি সড়ক। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সম্মেলন কেন্দ্রে একে একে প্রবেশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মর্কেলসহ কমপক্ষে ১৪০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্যারিসের আকাশে সূর্যের দেখা না মিললেও সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি চাই আপনারা এবারের সম্মেলনে একটা কার্যকর চুক্তি করবেন। যা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তা মোকাবিলায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আপনারা সবাই শক্তিশালী। জলবায়ু ইস্যুতে আপনারা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবেন। আপনারা আপনাদের শক্তি, সুচিন্তিত পরিকল্পনা দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো চিহ্নিত করে ক্ষতি কমিয়ে আনা এবং ক্ষতিপূরণে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন ফাবিয়া তার বক্তব্যে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় সারা বিশ্বে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অবশ্য এবারের সম্মেলনের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্য। তিনি দুপুর পৌনে ১টায় বক্তব্য দেন। তিন মিনিটের বক্তব্যে ওবামা বলেন, পরবর্তী প্রজম্ম আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা তাদের জন্য কী করছি কী রেখে যাচ্ছি তা তারা পর্যবেক্ষণ করছে। তাই পরবর্তী প্রজম্মের জন্য বৈশ্বিক ঊষ্ণতার বিষয়ে একসঙ্গে, একই সুরে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব সবাই জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছেন। সবার জন্য এবারের জলবায়ু সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি টিকিয়ে রাখতে হলে আমরা যারা এখানে এসেছি, সমবেত হয়েছি সবাইকে একটা সুনির্দিষ্ট চুক্তিতে আসতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভূাদিমির পুতিন বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুটি এখন বিশ্বমানবতার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। তাই মানবজাতির স্বার্থে আমাদের একটা আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে আসতে হবে। কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখতে হবে।