মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

পাটপণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর নির্দেশ

মানিক মুনতাসির

পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব ও বিভাগীয় প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সরবরাহ, বিপণন ও বহনের ক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি পর‌্যায়ে পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব কাজে পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ছাড়া নিজেদের নির্বাচনী ও বসবাস এলাকায় বিশেষ ভূমিকা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে শহর ও গ্রামাঞ্চলে জনসচেতনতা বাড়াতেও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

একাধিক মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে ছয় পণ্য সরবরাহ, বিপণন ও বহনে ‘পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারা দেশে গতকাল থেকে সাঁড়াশি অভিযান চালু করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাটের সুদিন ফেরাতে পাট চাষিদের ন্যায্যমূল্য পাইয়ে দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। পাটের মৌসুমে এবং সরকারিভাবে পাট কেনার সময় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট কেনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার অনির্ধারিত আলোচনায় বলেন, পাটের জিন রহস্য উম্মোচনের পর পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার ইতিমধ্যে অনেক বেড়েছে। উন্নতমানের পাটের বীজ সরবরাহ ও পাট পচানোর উন্নত কৌশল পাট চাষিদের হাতের কাছে পৌঁছে দিতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পর‌্যায়ক্রমে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালতে পাটপণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাটের আঁশ থেকে উন্নতমানের কাপড়, সুতা, শপিংব্যাগ, বস্তা, শোপিস ও নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, বন্ধ পাটকলগুলো দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি যেসব পাটকল লোকসানে রয়েছে সেগুলো লাভজনক করতে হবে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের পাটকলগুলোতেও উৎপাদন বাড়াতে সব ধরনের নীতিগত সহায়তা দিতে প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৫-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তার জন্য আদালতের পরিবর্তে সমস্যা সমাধানের জন্য সচিব কমিটি ও আন্তমন্ত্রণালয় আইনগত সহায়তা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে সচিব কমিটির কাছে অভিযোগ করা যাবে। সেখানে নিষ্পত্তি না হলে সিনিয়র একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ‘মন্ত্রিসভা কমিটির’ আপিল বোর্ডে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আদালতে মামলাজট কমাতে নেওয়া এডিআর (অলটারনেটিভ ডিসপিউট রেজুলেশন) উদ্যোগের মতোই সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরোধ নিষ্পত্তিতে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

শফিউল আলম জানান, সচিব কমিটির প্রধান থাকবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয়)। তার সঙ্গে বিরোধসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তাদের প্রতিনিধি, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার‌্যালয়ের একজন প্রতিনিধি (ডিজির নিচে নয়), মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সমন্বয়) এ কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরে কমিটি মনে করলে নতুন সদস্য নিতে পারবে বা বিশেষজ্ঞমত গ্রহণ করতে পারবে। আর আপিল কমিটির প্রধান হিসেবে সরকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রী থাকবেন। বিরোধ নিষ্পত্তিপ্রত্যাশী দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব, আইনমন্ত্রী ও সচিব, মুখ্যসচিব বা প্রধানমন্ত্রীর সচিব এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এর সদস্য হবেন। এর সঙ্গে আরও সদস্য যোগ করার দরকার হলে করা যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু নিয়ে বিদ্যমান পুরনো আইনটিকে কিছু পরিবর্তন করে এ আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন এ আইনের খসড়া অনুযায়ী ১৫০০ মিটারের বেশি দীর্ঘ সেতু, টানেল, টোল সড়ক, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সেতু বিভাগ করবে। উল্লিখিত সেতুর টোল বা ফি-সংক্রান্ত বিষয়গুলোও এ বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ ছাড়া গত ৫ থেকে ৯ অক্টোবর মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রীর ব্রাজিল সফর, ১০ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর সংস্কৃতিমন্ত্রীর রাশিয়া সফর, ২১-২৪ অক্টোবর মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর বেইজিং সফর, ২৮ থেকে ৩০ অক্টোবর শ্রমমন্ত্রীর ইন্দোনেশিয়া সফর এবং ১২ থেকে ১৫ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর হাঙ্গেরি সফর বিষয় মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর