শিরোনাম
বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাড়ছে মিশন, কমছে জনবল

২১টিতে নেই স্টাফ গাড়ি বাস্তবায়ন হয়নি কোনো আশ্বাস

জুলকার নাইন

বৈদেশিক সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে নতুন নতুন দেশে কূটনৈতিক মিশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে সরকার। ইতিমধ্যেই নতুন কয়েকটি দূতাবাস বা মিশন কার্যক্রমও শুরু করেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল ও সম্পদ বাড়ছে না। সদরদফতর ও বিশ্বের নানা প্রান্তে ৭১টি মিশন চালানোর জন্য বর্তমানে জনবল আছে মাত্র ২৩০ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ বছর আগে জনবল ৪৬০ জনে উত্তীর্ণ করার অনুমোদন দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু জনবল বাড়ানোর ক্ষেত্রে নয় প্রয়োজনীয় অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহযোগিতা পাওয়া যায় না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর। যে কারণে বিদেশে ২১টি মিশনের কোনো স্টাফ পর্যন্ত নেই। কিছু মিশনে আছে শুধু একজন কর্মকর্তা। ফলে অনেক কাজই যথাসময়ে করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন, আঞ্চলিক সহযোগিতা নিবিড় এবং সর্বোপরি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বসভায় দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সংহত ও সুদৃঢ় করাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। এসব কাজে সদরদফতর ও বিদেশে মিশনগুলোতে দায়িত্ব পালনের জন্য বর্তমান অর্গানোগ্রামে ২৯৬ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারবে মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাজের জন্য এ সংখ্যা অপ্রতুল বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। কিন্তু সে অর্গানোগ্রামে থাকা পদগুলোও পূর্ণ হয়নি। কর্তব্যরত আছেন মাত্র ২৩০ জন। এর মধ্যে ঢাকার সদরদফতরে আছেন মাত্র ১০০ জন। অথচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবের দফতর ছাড়াও অন্তত ২২টি গুরুত্বপূর্ণ অনুবিভাগ রয়েছে। প্রত্যেকটি অনুবিভাগের প্রধান একজন উপসচিব পদমর্যাদার মহাপরিচালক। তার অধীনে উপসচিব কিংবা সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার পরিচালক, সিনিয়র সহকারী সচিব, সহকারী সচিবসহ ১০ জন। জনবল কম হওয়ায় একই ব্যক্তি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। আর ৭১ মিশনে আছেন মাত্র ১৩০ জন। গড়ে দুজন করেও নেই মিশনগুলোতে। কিছু মিশনে একজন কর্মকর্তাকেই রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব থেকে শুরু করে সাচিবিক দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। তিনি কখনো রাষ্ট্রদূত বা মিনিস্টার বা কাউন্সিলর বা প্রটোকল অফিসার। ফলে ওই কর্মকর্তার কূটনৈতিক পদমর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব হয় না বেশিরভাগ সময়ই। যথাসময়ে করা সম্ভব হয় না রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজও। মিশনের যে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বৃদ্ধির গুরুদায়িত্ব রয়েছে, তাও হয়ে পড়ছে কষ্টসাধ্য। এর মধ্যেই আগামী জুন মাসের মধ্যে নাইজেরিয়া ও ইথিওপিয়ায় দুটি নতুন মিশন স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। জানা যায়, ১৯৮২ সালে ‘এনাম কমিটি’ প্রণীত সাংগঠনিক কাঠামো অনুসরণ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই প্রশাসনিক কাঠামোই এখনো চলছে। বিভিন্ন সময়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদ বাড়ানো হলেও মূল কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের দায়িত্বে থাকা প্রথম শ্রেণির পদগুলোর কোনো কাঠামো বাড়েনি। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস জনবল সংকটের কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করেন। ২০১০ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী সে প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেন। প্রস্তাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনবল ২৬২ থেকে বাড়িয়ে ৪৬০ করার কথা বলা হয়। এর মধ্যে অবশ্য ৮৪টি প্রথম শ্রেণির পদ ছিল। ২০১২ সালের ১৬ মে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময়ও জনবল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবি উত্থাপন করা হয়। সম্প্রতি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির কাছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সার সংক্ষেপে জানানো হয়, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বৈশ্বিক সম্পর্কের বহুমাত্রিক বিকাশ ঘটেছে। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ, রাষ্ট্রাচার কার্যক্রমসহ প্রতিনিধিত্বমূলক দায়িত্ব, ব্যবসা-বাণিজ্য, নানাবিধ মানবিক ও আইনি সহায়তা এবং সাংস্কৃতিক কর্মসূচির কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি বেড়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় এখনো ১৯৮২ সালের কাঠামো অনুসরণ করছে। ক্রমশই বেড়ে যাওয়া কার্যক্রম সামলাতে ওই পুরনো কাঠামো দিয়ে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় তা দুরূহ হয়ে পড়ে। সূত্র জানায়, বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাস বা মিশনে ভিসা, পাসপোর্ট, বাণিজ্য, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয় দেখার জন্য অর্থ, প্রবাসী কল্যাণ, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রেষণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ জন্য পৃথকভাবে অন্য মন্ত্রণালয় থেকে পদও সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু বাড়েনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব পদ। প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদনের পরও জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়ে এখনো আটকে রয়েছে। বার বার তাগাদা সত্তে¡ও এখনো রাজস্বে অন্তর্ভুক্তি হয়নি অনুমোদিত পদ। হচ্ছে শুধুই সময়ক্ষেপণ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর