শিরোনাম
বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ওবামার ভরসাহীন বক্তব্যে সম্মেলনে হতাশার সুর

নিজামুল হক বিপুল প্যারিস থেকে

ওবামার ভরসাহীন বক্তব্যে সম্মেলনে হতাশার সুর

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল দিনভর চলেছে প্ল্যানারি সেশন এবং বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলন। এসব সেশনে আলোচনার বিষয় ছিল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটা আইনি কাঠামো বা লিগ্যাল বাইন্ডিং এগ্রিমেন্ট (এলবিএ) করা। একই সঙ্গে প্যারিসের লা বুর্জের সম্মেলন কেন্দ্র জুড়ে ছিল হতাশার সুরও। সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় এমন হতাশা দেখা দিয়েছে। যদিও বারাক ওবামা বলেছেন সবাইকে একই সঙ্গে, একই সুরে কাজ করার জন্য। কিন্তু তার বক্তব্যে কেউই ভরসা রাখতে পারছেন না। এদিকে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে এলবিএ’র বিষয়ে উন্নত বিশ্বকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে চুক্তিতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জীবন-জীবিকা রক্ষার স্বার্থে আইনগত অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি রাখতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে আসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইনি কাঠামোতে যেতে আগ্রহ না দেখালেও চীন, রাশিয়া এবং সম্মেলন আয়োজনকারী দেশ ফ্রান্স এলবিএ করার ব্যাপারে খুবই সোচ্চার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্য থেকে আশার আলো দেখছেন না সম্মেলনে আসা রাষ্ট্রগুলোর প্রধান এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। শুধু কথার ফুলঝুরিতে ভাসছে এবারের সম্মেলন। বিক্ষিপ্তভাবে আলোচনা হচ্ছে। তাই চীন, রাশিয়া ও ফ্রান্স প্রস্তাব রাখছে এলবিএ করার। তা না হলে একুশ শতকের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার মাধ্যমে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন সম্ভব হবে না। আর তা করতে না পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব গোটা বিশ্বে ব্যাপকভাবে পড়বে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিত্র রাষ্ট্রগুলোকে গোপন চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন যাতে এবারের সম্মেলনে কোনো আইনি চুক্তিতে না যাওয়া হয়। ওবামার ওই চিঠির তথ্য ইতিমধ্যে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এ নিয়েও সম্মেলনে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের ড. সলিমুল হক বলেছেন, ওবামার বক্তব্যে নতুন দিকনির্দেশনা নেই। বরং হতাশাই বেশি।

আর ওবামার বক্তব্যে আশার আলো দেখছেন না জার্মানির পরিবেশকর্মী সিমো কুশিউ। তিনি হতাশার কণ্ঠে বলেন, ওবামা শুধু সবক দিয়েছেন। তিনি বিশ্বের জন্য কতটা করবেন, কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবেন তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি। এদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে না পারলে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলো যারা সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিতে আছে তাদের ক্ষতি হবে বেশি। আর বাংলাদেশের ঝুঁকির মাত্রা এতটাই প্রকট হবে যে, উপকূলীয় এলাকার চার কোটির বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। তারা সবাই উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২১-এ বাংলাদেশ এবং লিস্ট ডেভেলপ কান্ট্রি (এলডিসি) ভুক্ত স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র, দ্বীপরাষ্ট্র ও আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে লিগ্যাল বাইন্ডিং এগ্রিমেন্ট করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অতিরিক্ত সচিব ড. মনজুরুল হান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে না পারলে আমাদের মতো উপকূলীয় দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, আমাদের উপকূলের চার কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে যাবে, তাদের আশ্রয় দেওয়ার জায়গা থাকবে না। উদ্বাস্তু এই মানুষের ভার কোনোভাবেই আমাদের রাষ্ট্র বহন করতে পারবে না। তাই এলবিএতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জীবন-জীবিকা রক্ষার স্বার্থে আইনি অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশ সোচ্চার।

সর্বশেষ খবর