বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
উদ্বিগ্ন বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ

পণ্য আসে, হয় না খালাস

বেনাপোল প্রতিনিধি

পণ্য আসে, হয় না খালাস

নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বেনাপোল বন্দরে খালাশের অপেক্ষায় পড়ে আছে বিপুল পরিমাণ মালামাল। ভারত থেকে আমদানিকৃত বন্দর শেডে পড়ে থাকা এ মালামালের খালাশ নিয়ে উদ্বিগ্ন কাস্টম ও বন্দর কতৃপক্ষ। দফায় দফায় নিলামে উঠিয়ে কাক্সিক্ষত ক্রেতা মিলছে না। পণ্যের গুণগত মান নষ্ট, ঘোষণার চেয়ে মালামাল কম, ধ্বংসযোগ্য মালামালের ব্যাপারে সিন্ধান্তহীনতাসহ নানামুখী জটিলতার কারণে গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২৬ হাজার মে. টন মালামাল বন্দরের বিভিন্ন শেডে পড়ে আছে।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক আবদুল জলিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমদানি করা পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে খালাস নেওয়া না হলে ও পণ্য নিলামে বিক্রি করার এখতিয়ার কাস্টম কর্তৃপক্ষের। অথচ বছরের পর বছর অনেক মালামাল বন্দরের বিভিন্ন শেডে পড়ে থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা নিলামে বিক্রি করা হয় না। দীর্ঘ দিন অযত্ন অবহেলায় পণ্য পড়ে থাকার কারণে এর গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আমদানি কারকরা মালামাল আর খালাস নেয় না। এ ছাড়া বন্দরের মাশুল অনেক কম হওয়ার কারণে অনেক আমদানিকারক বন্দরের শেডকে নিরাপদ গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বাজারে মালামালের চাহিদা বুঝে বন্দর থেকে মালামাল খালাস নিয়ে অনেক আমদানিকারক সরাসরি ক্রেতার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়ে থাকেন। এসব কারণে বন্দরে পণ্যজট দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

আমদানি পণ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিলাম প্রদানে কাস্টম কর্তৃপক্ষের গড়িমশি এবং আমদানিকারকদের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির কারণে বন্দরে পড়ে থাকা পণ্যের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে- বন্দর কর্তৃপক্ষের এ ধরনের বক্তব্য মানতে নারাজ বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ফিরোজ উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা যথাযথ আইন মেনেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিলাম অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে থাকি। প্রয়োজনীয় ক্রেতা ও যথাযথ নিলাম মূল্য না পাওয়ায় এবং আইনগত কিছু জটিলতার কারণে মালামালের অনেকটাই নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া কিছু অসাধু আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কম ও নিম্নমানের মালামাল আমদানি করার কারণে এসব মালামাল নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হলেও নিলামে ওই সব মালামাল কেউ কিনতে চান না। ফলে দীর্ঘ দিন শেডে পড়ে থেকে এসব মালামালের স্তূপ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া আমদানি করা অনেক মালের রাসয়নিক পরীক্ষা, শুল্ক মূল্য নির্ধারণে আইন গত জটিলতার কারণে বন্দর থেকে পণ্য খালাস বিলম্বিত হয়ে থাকে। বন্দরে আটকা পড়া পঁচিশ হাজার মে. টন মালামালের মধ্যে প্রায় বিশ হাজার মে. টন মালামাল নিলাম ও ধ্বংসযোগ্য। নিলামযোগ্য এসব পণ্য যথাসময়ে বন্দর থেকে খালাস নিলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বহুলাংশে বেড়ে যেত। সম্প্রতি সময়ে বেনাপোল কাস্টম হাউসে ঘাটতি রাজস্বের অনেকটা পূরণ করা সম্ভব হতো।

এ ব্যাপারে বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কামাল উদ্দিন শিমুল বলেন, বন্দর থেকে পণ্য চুরি এবং কাস্টম কর্তৃপক্ষের হয়রানির কারণে অনেক আমদানিকারক বন্দর থেকে মালামাল খালাস নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ ছাড়া ভারতে ডলার পাচারের সঙ্গে জড়িত এক শ্রেণির অসাধু আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় নিম্নমানের মালামাল এনে বন্দর শেডে অহেতুক বছরের পর বছর ফেলে রাখে। যার কারণে পণ্যজট দিন দিন বাড়ছে। বেনাপেল বন্দরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরে জুন ২০১৫ পর্যন্ত ভারত থেকে এক লাখ ৭০৮টি ট্রাকে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৮ মে. টন মালামাল আমদানি হয়েছে, একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৬৬টি ট্রাকে ১৪ লাখ চার হাজার ৩৪২ মে. টন মালামাল।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর