শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
পর্যবেক্ষণ

জোরের যুক্তি নয় চাই যুক্তির জোর

রোবায়েত ফেরদৌস

আজ ৩ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে ‘জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি বিতর্ক উৎসব-২০১৫-১৬’। এ উৎসবের স্লোগান হচ্ছে ‘তথ্য যুক্তি প্রযুক্তি’। স্লোগানের এ তিন প্রত্যয়কে ধারণ করতে পারে একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিতর্ক। বিতর্কের অস্ত্র বুলেট নয়, শব্দ। এখানে বিতার্কিকরা শব্দ, যুক্তি, বাক্য দিয়ে একদল আরেক দলকে কুপোকাত করে। বিতর্ক জোরের বিপরীতে যুক্তির কথা বলে। সমাজের মধ্যে সেই জায়গাটা যদি থাকে তাহলে হানাহানি, মারামারি, সংঘাত থাকবে না। সমাজে সেই জায়গাটা তৈরি করতে হবে। সে জন্য বিতর্ক হতে পারে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মাধ্যম। বিতর্ক অনাদিকাল থেকেই পৃথিবীতে আছে। বাংলা ভূখণ্ডে তো বটেই। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যেমনটা বলেছেন, বাঙালি তর্কপ্রিয় জাতি। এ তর্কপ্রিয় জাতি নানা বিষয় নিয়ে বিতর্ক করেছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিতর্কের বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিতর্ক হয়েছে এবং হচ্ছে। এখনকার সময়টাকে বলা হয় তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে গেছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেট। এখন গ্রামের স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও পথের মোড়ে দাঁড়িয়ে ফেসবুক নিয়ে তর্ক করে। কলেজে যেতে যেতে দুই বন্ধু গুগল নিয়ে আলোচনা করে। তরুণ প্রজন্ম বিতর্ক যেমন ভালোবাসে তারা তথ্যপ্রযুক্তিকেও ভালোবাসে। তারা তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে থাকতে চায়। তারা হালনাগাদ থাকতে চায়। বিতর্ক তাদের এ চাওয়াকে আরও শানিত করে। আরও তীক্ষè করে। তাই এখন সময় এসেছে প্রযুক্তিকে বিতর্কের বিষয় হিসেবে বেছে নেওয়ার। এটা খুবই আনন্দের একটা ব্যাপার যে ‘তথ্যপ্রযুক্তি বিতর্ক উৎসব’ শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক হবে না। এটি দুই মাসব্যাপী দেশের ১৬টি অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে অংশ নিচ্ছেন ৬৪ জেলার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিতার্কিকরা। আমাদের মধ্যে একটা প্রবণতা আছে শহর অভিমুখী হওয়া, ধনিক অভিমুখী হওয়া। সে প্রবণতা ভেঙে এ বিতর্ক উৎসব গ্রামে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে যাচ্ছে, এটা খুবই আশাজাগানিয়া ব্যাপার। প্রান্তিক পর্যায়েও যে মেধাবী ছেলেমেয়ে থাকে, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে এ বিতর্ক উৎসবের মধ্য দিয়ে সেটি উঠে আসবে। আমার মনে হয় তথ্যপ্রযুক্তিকেন্দ্রিক আমাদের যে সমস্যাগুলো আছে, যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলো আইসিটির প্রতিপাদ্য হতে পারে। তাহলে তরুণরা এসব সমাধানের সুপারিশ করতে পারবে। বিতর্ক আয়োজনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এ আয়োজনটা অল্প খরচে খুব সহজে করা যায়। এক স্কুলের তিনজন ছাত্র আরেক স্কুলের তিন ছাত্রের সঙ্গে বিতর্ক করতে পারে। এক কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে আরেক কলেজে গিয়ে বিতর্ক করতে পারে। অল্প খরচে সবচেয়ে পরিশীলিত একটা মাধ্যম হচ্ছে বিতর্ক। আমি এ বিতর্ক উৎসবের সাফল্য কামনা করি। আমি মনে করি এমন উৎসব আরও বেশি বেশি হওয়া উচিত। তথ্যপ্রযুক্তির এ বিতর্ক উৎসবের আয়োজনের সঙ্গে জড়িত আছে ‘ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার’ ও ‘বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন’। এখানে বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশে আগামীর সম্ভাবনা হচ্ছে অনলাইন। অনেকেই এটাকে মনে করেন ভুল লাইন। কিন্তু এ ধারণাটি ভুল। এটিই আসলে সঠিক লাইন। কারণ অনেককাল আগে চীন দেশে যে কাগজকেন্দ্রিক সভ্যতা শুরু হয়েছিল তার দিন কিন্তু ক্রমেই শেষ হয়ে আসছে। বলা হচ্ছে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে কাগজ বলে কিছু থাকবে না, শুধু টয়লেট পেপার ছাড়া। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৮ কোটি হচ্ছে তরুণ। এর মধ্যে আবার ৩ কোটিই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এ ৩ কোটির অর্ধেক অর্থাৎ দেড় কোটি ফেসবুক ব্যবহার করে। এ পরিসংখ্যান দিয়ে অবশ্য বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে না। এটি বোঝার জন্য মার্ক জুকারবার্গের একটি স্ট্যাটাসের দিকে নজর দিতে হবে। কয়েক মাস আগে মার্ক জুকারবার্গ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘বাংলাদেশি জয়ীতা’র ছবি ব্যবহার করেছেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ পুরো পৃথিবীতে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে বড় একটা জায়গা করে নেবে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আর এ সত্যটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন আমাদের সরকারপ্রধানরাও। তারা তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছেন।

লেখক : শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর