শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

সৌন্দর্যের স্বর্গ বলধা গার্ডেন

মোস্তফা কাজল

সৌন্দর্যের স্বর্গ বলধা গার্ডেন

ঢাকার ঐতিহাসিক স্থানগুলোর একটি বলধা গার্ডেন। দেশে-বিদেশে এর পরিচিতি রয়েছে। এ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে আছে এ উদ্যানটি। এ উদ্যানকে বলা হয় ফুল ও উদ্ভিদের জীবন্ত জাদুঘর। নগরজীবনের ব্যস্ততা ভুলে একটু প্রশান্তির আশায় একান্তে সময় কাটাতে অনেকেই এক সময় এখানে ছুটে আসতেন। দেশি-বিদেশি প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে ভিড় করতেন নির্মল হাওয়ায় নির্জনে একটু সময় কাটাতে। এ উদ্যানটিতে স্বাধীনতার আগে ও পরে বাংলাদেশে আগত যে কোনো বিদেশি পর্যটকের পছন্দের তালিকায় রাজধানীর ওয়ারীর বলধা গার্ডেনের নামটি প্রথমেই থাকত। শুধু পর্যটকরাই নন, দেশি-বিদেশি বরেণ্য ব্যক্তিরাও এসেছেন এ উদ্যানটিতে। তাদের অনেকেই নিজ হাতে নানা প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করে উদ্যানের ইতিহাসে রেখেছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। এদের মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও  নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনসহ অনেকের নাম স্বর্ণাক্ষরে জড়িয়ে আছে। যান্ত্রিক এ শহরের মানুষগুলো সারা দিন কর্মব্যস্ততার মাঝে নিজের মতো করে সময় কাটাতে চান। কিন্তু সবাই পারেন কি। তাদের কেউ কেউ ছুটে আসেন এই প্রকৃতির কাছে। ঘুরে বেড়াতে চান একটু খোলামেলা গাছ-পাছালির ছায়ায় আলো-বাতাসে। আর বলধা গার্ডেন সেই অভাবকে ঘোচাতে বিচিত্র সব গাছের সমাহারে রাজধানীর বুকে সবুজ বৃক্ষের স্বর্গ হয়ে বসে আছে। বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ৩.৩৮ একর জমির ওপর ১৯০৯ সালে উদ্যানটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৮ বছর। বিরল প্রজাতির ৮০০ গাছসহ বাগানে প্রায় ১৮ হাজার গাছ শোভা পাচ্ছে। বাগানে এমন অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই। এখানে শুধু ক্যাকটাসই রয়েছে ৭০ প্রজাতির। এ ছাড়াও যেসব প্রজাতির গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে এ বাগান, সেগুলো হলো- অর্কিড, জলজ উদ্ভিদ, শিলালগ্ন প্রজাতি দেয়াল লতা, বৃক্ষশালাসহ বিবিধ গাছপালা। জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ওয়ারী, টিকাটুলী ও নারিন্দার ঠিক মাঝখানে দুটি ভাগে বলধা গার্ডেন তৈরি করেন। বলধা গার্ডেনের এক পাশের নাম সাইকি, অপর পাশের নাম সিবিলি। ‘সাইকি’ অর্থ আত্মা এবং ‘সিবিলি’ ছিল গ্রিকের প্রকৃতি দেবীর নাম। সাইকি অংশে সবার যাওয়ার অনুমতি নেই। এটা বন্ধ করে রাখা হয়। কারণ, এখানে এমন কিছু দুর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে যা মানুষের আনাগোনায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু গবেষকরাই এখানে যেতে পারেন। সাইকিতে রয়েছে নীল, লাল ও সাদা শাপলাসহ রঙিন পদ্মা, তলা জবা, অপরাজিতা, ক্যাকটাস, পাম গাছ, জবা প্রভৃতি। এখানে রয়েছে সেঞ্চুরি প্লান্ট নামক শতবর্ষে একবার ফোটা ফুলের গাছ। রয়েছে বাওবাব নামক এক ধরনের গাছ। এ গাছের খোঁড়লের মধ্যে আফ্রিকার আদিবাসীরা মিসরের ফারাওদের মৃতদেহ রেখে মমি বানাত। এ অংশের দুটি গ্রিন হাউসের একটিতে আছে নানা প্রজাতির অর্কিড এবং অন্যটিতে রয়েছে ঔষধি ও ইনডোর উদ্ভিদ। এখানেই ছিল বলধার জমিদার বাড়ি। বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশটি সবার জন্য উন্মুক্ত। উদ্যানের এ অংশে রয়েছে সূর্যঘড়ি। যার মাধ্যমে সূর্য নিজেই সময় বলে দেয়। এ বাগানের সৌন্দর্য ও আকর্ষণের শেষ নেই। সূর্যঘড়ি সে রকমই একটি। ঘড়িটি প্রথম থেকে চালু রয়েছে। সূর্যের সঙ্গে মিলিয়ে এ ঘড়ির সময় ওঠে। দর্শনার্থীরা শঙ্খনদ, জয় হাউস এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ফুল দেখার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যঘড়িটির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকান।

সর্বশেষ খবর