শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সমুদ্র দখলের চেষ্টা করছে মিয়ানমার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সমুদ্র দখলের চেষ্টা করছে মিয়ানমার

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হলেও বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ অংশের মহীসোপান দখলের চেষ্টা করছে মিয়ানমার। এ জন্য দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের কাছে আবেদনও করা হয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও জাতিসংঘে পাল্টা চিঠি দিয়ে মিয়ানমারের অযৌক্তিক দাবিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র মতে, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে গত জুলাই মাসে জাতিসংঘের কাছে বঙ্গোপসারের মহীসোপান সংক্রান্ত একটি দাবি উত্থাপন করে আবেদন করা হয়। এর আগে মিয়ানমার ২০০৮ সালে জাতিসংঘে আরেকটি আবেদন করেছিল। এবারের আবেদন আগের আবেদনটিরই সংশোধিত রূপ। নতুন এই আবেদনে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ও ভারতের মহীসোপানের অংশ তাদের প্রাপ্য বলে দাবি করেছে। মিয়ানমারের এই আবেদনের তথ্য জানার পর পরই বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও জাতিসংঘে পাল্টা চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের চিঠিতে জার্মানির হামবুর্গে সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ইটলস) ও সুইজারল্যান্ডের হেগের সালিশি আদালতে বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমার দুই রায়ের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করে মিয়ানমারের দাবি প্রত্যাখ্যান করার আবেদন জানানো হয়েছে।

প্রতিবাদ স্বরূপ পাঠানো বাংলাদেশের চিঠিতে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের সংশোধিত প্রস্তাবে ইটলস ও সালিশি আদালতের রায়ে বাংলাদেশের অংশ বলে বিবেচিত মহীসোপানের অংশও তাদের বলে দাবি করেছে। বাংলাদেশ মনে করে মিয়ানমারের দাবি ইটলসের রায়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। শুধু তাই নয়, মিয়ানমারের দাবি সালিশি আদালতের রায়ের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই জাতিসংঘ যেন মিয়ানমারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে, না হলে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে।’ জানা যায়, সমুদ্রসীমা বিরোধ নিয়ে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সামরিক সংঘাত সৃষ্টির উপক্রম হয়েছিল। বাংলাদেশের দাবি করা সমুদ্রসীমার মধ্যে মিয়ানমার গ্যাস অনুসন্ধান চালানোর চেষ্টা করে। এ সময় বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিনের ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অনুসন্ধান কাজ অব্যাহত রাখার জন্য মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠালে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। জবাবে বাংলাদেশও বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ সীমানায় চারটি যুদ্ধজাহাজ পাঠায় এবং সীমান্তে সেনা সমাবেশ করে। দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানি মিয়ানমারের পক্ষে গ্যাস অনুসন্ধান কাজে নিয়োজিত ছিল। মিয়ানমার বঙ্গোপসাগরে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কার করে এবং বাংলাদেশের দাবি করা সমুদ্রসীমার মধ্যে অনুসন্ধান কাজ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়। সমুদ্রসীমা ও মহীসোপানের মালিকানা নিয়ে এই বিরোধের কারণে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত হয় এবং এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশায় বাংলাদেশ ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর ল অব দ্য সি বা ইটলসে মামলা করে। মিয়ানমারও সমুদ্রসীমা বিরোধ ইটলসের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে সম্মত হয় সে বছরের ১৪ ডিসেম্বর। পরে দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১২ সালের ১৩ মার্চ ২৩ সদস্যবিশিষ্ট ট্রাইব্যুনাল বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের ন্যায্যতাভিত্তিক সমুদ্রসীমার দাবিকে সমুন্নত রেখে ১৫১ পৃষ্ঠার ৫০৬ অনুচ্ছেদ সংবলিত রায় ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন বা নিজস্ব অর্থনৈতিক সীমা ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বিপরীত দিকে মিয়ানমারের প্রস্তাব ছিল সমদূরত্ব পদ্ধতি। সেই পদ্ধতিতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ১৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেই রায় দিয়েছিল আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ইটলস। মিয়ানমার সরকার তখন মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু এখন মিয়ানমার সেই রায় ভঙ্গ করে তাদের আগের দাবির কাছাকাছি নতুন অবস্থান নিয়ে জাতিসংঘে আবেদন করল।

সর্বশেষ খবর