শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আঁধারে আলো ‘ভোলানন্দ’

আঁধারে আলো ‘ভোলানন্দ’

সংসারের ঘানি টানতে সকাল ৯টা বাজতেই ছুটতে হয় বিভিন্ন অফিস বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। কৈশোরের যে সময়টুকু ওদের কাটার কথা স্কুলের সহপাঠীদের সঙ্গে পড়ালেখা-খেলাধুলায়, সে সময়ে ওরা হাল ধরেছে অভাবের সংসারে। জীবন-জীবিকার কশাঘাতে রঙিন স্বপ্নগুলো বিবর্ণ হয়ে গেলেও হাল ছাড়তে রাজি নয়। কণ্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে ওরা আঁধার জয়ের স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন বোনে সুন্দর ভবিষ্যতের। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সন্ধ্যা হলেই ছুটে যায় ‘ভোলানন্দ নৈশ উচ্চবিদ্যালয়ে’।

দীর্ঘ ৫২ বছর থেকে এ স্কুলটি সিলেটের দরিদ্র, কর্মজীবী ও ছিন্নমূল শিশুদের আলোকিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের একমাত্র নৈশ উচ্চবিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা করে অনেক দরিদ্র শিশু শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েছে। স্কুলটিতে কলেজ শাখা চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে সিটি করপোরেশনের। সিলেট সিটি করপোরেশনের শিক্ষা সংস্কৃতি পাঠাগার ও সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা নেহার রঞ্জন পুরকায়স্থ জানান, ১৯৬৩ সালে সিলেট শহরের কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর চেষ্টায় রাজা জিসি স্কুলের কয়েকটি কক্ষ নিয়ে কর্মজীবী ও ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষাদানে ‘ভোলানন্দ নৈশ বিদ্যালয়’ চালু করা হয়। ১৯৭৬ সালে চৌহাট্টায় ভোলাগিরি আশ্রমের সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনাক্রমে আশ্রমকে কিছু টাকা দান করে স্কুলের জন্য ২৯ শতাংশ ভূমি শর্তসাপেক্ষে গ্রহণ করা হয়। ১৯৮১ সালে স্কুলটির পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে সিলেট পৌরসভা। সেই থেকে সিলেট পৌরসভা ও পরে সিটি করপোরেশন স্কুলটি পরিচালনা করে আসছে। সিসিক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে স্কুলটিতে ষষ্ঠ থেকে এসএসসি পর্যন্ত পাঠদান চলছে। কর্মজীবী শিশুরা কাজ শেষে সন্ধ্যা ৭টায় স্কুলে আসে, রাত ১০টা পর্যন্ত পাঠদান দেওয়া হয় তাদের। প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষায়ও বিদ্যালয়টি আশাব্যঞ্জক ফল করছে। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় স্কুল থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৭ জন উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৮০ জন কর্মজীবী ও ছিন্নমূল শিশু বিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা করছে। সিসিক সূত্র আরও জানায়, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিদ্যালয়টির উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। ১ কোটি ৯৪ লাখ ৪৩ হাজার ২৮৫ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের চার তলা ভবন নির্মাণ করেন। ১১ জুলাই ভবনটি উদ্বোধন করা হয়।

বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শাহিদ আহমদ জানায়, দিনে সে একটি অফিসে কাজ করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওই অফিসে কাজ শেষে স্কুলে যায়। নৈশ বিদ্যালয়টি না থাকলে সে পড়ালেখার সুযোগই পেত না। গত এসএসসি পরীক্ষায় ভোলানন্দ নৈশ উচ্চবিদ্যালয় থেকে পাস করে শাহ খুররম কলেজে ভর্তি হয়েছে আবদুর রহিম। সে জানায়, স্কুলে পড়ালেখা করা অবস্থায় একটি অফিসে কাজ করত। দিনে অফিসের কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় স্কুলে পড়তে যেত। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অফিসের কাজ ছেড়ে দিয়েছে। এখন প্রাইভেট টিউশনি করে সংসারে আর্থিক সহযোগিতা ও পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছে। ভোলানন্দ নৈশ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আছাদ মিয়া জানান, স্কুলের প্রায় সব শিশু দরিদ্র ও কর্মজীবী। দিনে স্কুলে যাওয়ার সময় না পেয়ে তারা রাতে ওই বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। এ স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে দরিদ্র পরিবারের অনেক ছাত্র পরে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি বলেন, স্কুলে কারিগরি শিক্ষা চালু করা গেলে এসব দরিদ্র শিক্ষার্থী আরও বেশি উপকৃত হতো। এ ছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা গেলে তারা দিনের বেলা কাজ না করে পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারত। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব জানান, বর্তমানে দিনের বেলা স্কুলটিতে ‘পথকলি শিশু বিদ্যালয়’ নামে একটি শাখা চালু রয়েছে। ওই শাখার মাধ্যমে পথশিশুদের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান দেওয়া হয়। রাতে নৈশ উচ্চবিদ্যালয়ের মাধ্যমে কর্মজীবী দরিদ্র শিশুরা এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। আগামী বছর থেকে বিদ্যালয়টিতে দিনের বেলা ইংলিশ মিডিয়ামে পাঠদান চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর