শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

তিন কারণে বাদ পড়তে পারেন অনেক প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন কারণে বাদ পড়তে পারেন অনেক প্রার্থী

বিশেষ তিনটি কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে অনেক প্রার্থীর। মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে ১০০ জন ভোটারের সমর্থন তালিকা দৈবচয়নের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই, ১২ ডিজিটের টিআইএন নম্বর ও ঋণখেলাপির কারণেই মূলত বেশি প্রার্থিতা বাতিল হয় বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। আজ-কাল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা।

জানা গেছে, বাছাইয়ের আগে নির্বাচনী আইন অনুসরণে প্রার্থীদের অযোগ্যতা, দল মনোনীত প্রার্থী নিশ্চিতে ক্ষমতাপ্রাপ্তদের নাম ও নমুনা স্বাক্ষর, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন যাচাই এবং ঋণখেলাপির তথ্য সরবরাহ, হলফনামার সঙ্গে প্রয়োজনীয় দলিলাদি যাচাই, মনোনয়নপত্রের প্রস্তাবক-সমর্থক যাচাইসহ নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে  নির্বাচন কমিশন। ইসির কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়নপত্র জমা বাছাইয়ের সার্বিক বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে, এখন সংশ্লিষ্ট সবকিছু গুছিয়ে রাখবেন; রিটার্নিং অফিসার আজ শনিবার ও কাল রবিবার প্রার্থী বা তার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বাছাই করবেন। বিধি মেনে মনোনয়নপত্র বৈধ না হলে বাতিল করা হবে। তবে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবে সংক্ষুব্ধরা।

পৌর নির্বাচনে জেলা সদরের পৌরসভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), অন্য পৌরসভায়  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, মনোনয়ন বাছাই আইনানুগভাবে ও সঠিকভাবে করবেন রিটার্নিং অফিসাররা। বাছাইয়ের সময় প্রার্থী ও তার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন; অস্বাভাবিক কিছু ঘটনার কারণ নেই। তিনি জানান, কেউ বাদ পড়লে আপিল (জেলা প্রশাসক আপিল কর্তৃপক্ষ) করার বিধান রয়েছে। আপিলের পরও ইসির ক্ষমতা রয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দল মনোনীত একজন প্রার্থীই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে এবার। মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ১০০ ভোটারের সমর্থন লাগবে। তবে সাবেক মেয়রদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সমর্থন তালিকা লাগবে না। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদ নির্দলীয় থাকায় আগের মতোই প্রার্থী হতে হবে।

প্রার্থীদের টিআইএন নম্বরসহ হলফনামা, প্রয়োজনীয় দলিলাদির কপিসহ অন্তত ৫টি কাগজপত্র দিতে হচ্ছে। পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা স্বপদে থেকে ভোট করতে পারলেও স্থানীয় সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানের কোনো জনপ্রতিনিধি ভোট করতে চাইলে পদ ছাড়তে হবে। প্রার্থী, প্রস্তাবক ও সমর্থককে পৌর এলাকার ভোটার হতে হবে। একই ব্যক্তি একই পদে একাধিক প্রার্থীর প্রস্তাবক সমর্থক হতে পারবেন না।

ঋণখেলাপির তথ্য সরবরাহ

পৌর নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সুবিধার্থে ঋণখেলাপিদের তথ্য দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দিয়েছিল ইসি। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মনছুরা খাতুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো এবং সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করার নির্দেশনা দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সিআইবি ডাটাবেজে সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মাসিক ঋণতথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। ৫০ হাজার টাকার নিচে বকেয়া ঋণস্থিতি সম্পন্ন ঋণখেলাপি এবং ৩১ অক্টোবরের পরবর্তীতে ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য প্রয়োজনে সরাসরি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং অফিসারকে সরাসরি তথ্য সরবরাহের সুবিধার্থে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শুক্র, শনি ও সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবার প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর সিআইবি সেল খোলা রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৯(২)(ঝ)(ঞ) এর বিধান বলে ঋণখেলাপি ব্যক্তিরা পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে

দলভিত্তিক পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপদাধিকারী বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রত্যয়ন দিতে হবে দল মনোনীত প্রার্থীকে। ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, নির্বাচন কমিশনে এ পর্যন্ত অন্তত ২২টি দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির তালিকা এসেছে। নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রিটার্নিং অফিসারের কাছেও এ সংক্রান্ত তথ্য থাকবে। এরপরও ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ও স্বাক্ষরের তথ্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দলের সংখ্যাও বাড়বে। কোনো প্রত্যয়ন নিয়ে যাচাই করার প্রয়োজন হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট দলকে ফোন করে নিশ্চিত হতে পারেন, বলেন তিনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৫টি যাচাই হবে

মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে ১০০ জন ভোটারের সমর্থন তালিকা দৈবচয়নের ভিত্তিতে যাচাই করা হবে। ইসির সহকারী সচিব রাজীব আহসান জানান, ১০০ ভোটারের তালিকা ইমেইল বা অন্য কোনো মাধ্যমে ইসিতে পাঠাবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ইসির মনোনীত কর্মকর্তা দৈবচয়নের ভিত্তিতে কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে সমর্থন তালিকা থেকে ৫টি সংখ্যা চিহ্নিত করবেন। তা রিটার্নিং অফিসারকে জানানোর পর সমর্থকের নাম, স্বাক্ষরের সঠিকতা যাচাই করবেন তিনি।

টিআইএন যাচাই

পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর পদের জন্য ১২ ডিজিটের টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক করেছে ইসি। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় প্রার্থীদের আয়কর রিটার্নের তথ্যাদি যাচাইয়ের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ তার প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীরা আয়কর সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছেন তা যাচাই করা হতে পারে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, পৌরসভায় দলভিত্তিক হওয়ায় প্রত্যয়ন, ১০০ ভোটারের সমর্থন তালিকা, টিআইএন প্রথমবারের মতো প্রার্থীদের দিতে হচ্ছে। হলফনামার মিথ্যা তথ্য দিলে, প্রয়োজনীয় দলিলাদি দিতে ব্যর্থতাসহ নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার আগের বিধানগুলো বহাল রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর