শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঐক্য পরিষদের মহাসমাবেশ

রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার দাবি

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার দাবি

অস্তিত্ব রক্ষার প্রত্যয়ে এবং সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে গতকাল বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যথাযথ অংশীদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের কল্যাণে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল বিকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী মহাসমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত বীরউত্তমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, ঐক্য পরিষদের সভাপতি ঊষাতনতালুকদার এমপি, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্মল রোজারিও, ঐক্য পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক মনিন্দকুমার নাথ প্রমুখ। মহাসমাবেশে সাত দফা দাবিনামা পেশ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার হলেও সংখ্যালঘুদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। এখনো তারা প্রতিনিয়ত নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়টি সরকার ও রাজনীতিকরা জানেন না, এমন নয়। তিনি বলেন, আইয়ুব সরকার, জিয়া সরকার, এরশাদ সরকারসহ প্রতিটি সামরিক সরকারের মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু থেকে মন্ত্রী থাকলেও বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারে তা নেই। সরকারের উদ্দেশে সুরঞ্জিত বলেন, সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাংক বানাবেন না। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সংগ্রাম ছাড়া অধিকার আদায়ের আর কোনো পথ খোলা নেই। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে সুরঞ্জিত বলেন, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, দাবি আদায়ে আমরা আগামী ছয় মাস অপেক্ষা করব। এর মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম গড়ে তোলা হবে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আরও বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মৃত্যুর কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে প্রতিবিপ্লবীরা যে চেতনা প্রতিষ্ঠিত করেছে, আমরা সে চেতনায় এগোচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত বছর ক্ষমতায় থাকার পরও সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন হয়নি। সমাজের সব ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি। আমরা সমান অধিকার চাই। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন ও সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, আজকের এ অনুষ্ঠানে আসার আগে মনে করেছিলাম এখানে এসে বিজয়ের গান শুনব। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাকে অবাক বিস্ময়ে শুনতে হয়েছে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের নির্মম কথা। কয়েক বছর আগে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছিলাম, এভাবে নির্যাতন চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরে দেশে কোনো সংখ্যালঘু থাকবে না। কিন্তু এর পরও রাষ্ট্রের আচরণে মৌলিক পরিবর্তন দেখি না। সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না— এ নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকে কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করব, যখন ইচ্ছা হবে মালিকের মতো আচরণ করে এক ধরনের সুখের অনুভূতি দেখাব— এ ধরনের আচরণ বন্ধ করতে হবে। কোনো সভ্য রাষ্ট্র এ ধরনের আচরণ করতে পারে না। মহাসমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে— জাতীয় সংসদে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যথাযথ অংশীদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত, সাংবিধানিক বৈষম্য বিলোপ, সমঅধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত, স্বার্থবান্ধব আইন বাস্তবায়ন ও প্রণয়ন, শিক্ষাব্যবস্থার বৈষম্য নিরসন, দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে উত্তরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধতা সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গঠন। সমাবেশে বক্তারা দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে এসব বন্ধ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর