রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অবৈধ পার্কিং নৈরাজ্য

বিশেষ প্রতিনিধি

অবৈধ পার্কিং নৈরাজ্য

রাজধানীর রাজপথে অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে দুঃসহ যানজট থেকে রেহাই মিলছে না। পরিকল্পিত পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় নগরবাসী ব্যস্ত সময়েও রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্কিং করে। এতে যানজট দিন দিন আরও তীব্র হচ্ছে। নগর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরিকল্পিত পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। পার্কিং নৈরাজ্যের সঙ্গে একশ্রেণির ইজারাদার, পুলিশ ও রাজনৈতিক সুবিধাভোগীর স্বার্থের সম্পর্ক থাকায় এটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। নগরীতে যে কয়েকটি পার্কিং স্পেস গড়ে উঠেছে সেগুলোও তাদের কারণে কার্যকর করা যাচ্ছে না। ব্যাংকপাড়া হিসেবে খ্যাত দিলকুশায় সাধারণ বীমা টাওয়ারে ২০০৬ সালে পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হলেও সেখানে গাড়ি উঠছে না। অথচ মতিঝিল-দিলকুশার ব্যস্ত সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার গাড়ি দিনভর পার্ক করে রাখা হয়। সেগুলো থেকে নিয়মিত ইজারা তোলা হয়। এর পাশাপাশি ৩৭ তলা সিটি সেন্টারেও প্রায় সাড়ে ৫০০ গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানেও গাড়ি উঠছে না। নগরীর ব্যস্ত এলাকার মূল সড়কে, শপিংমল ও সুপার মার্কেটের সামনে এলোপাতাড়ি গাড়ি পার্কিং হচ্ছে। এসব এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় অসহনীয় যানজট লেগে থাকে। ফলে নগরবাসীর কর্মঘণ্টা নষ্ট ও মানুষকে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় ভোগান্তি।

রাজধানীর পার্কিং স্পেস দখলমুক্ত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে রাজউক, সিটি করপোরেশন, সওজ, ঢাকা ওয়াসা, রেলওয়েসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে উচ্ছেদ অভিযানে নামে। এ সময় সড়ক সংলগ্ন অবৈধ স্থাপনা এবং বহুতল ভবনের কার পার্কিং স্পেস অবমুক্ত করা হয়। ওই সময় হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার কারণে রাজপথ প্রশস্ত হয়। উচ্ছেদ আতঙ্কে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে পার্কিং স্পেস ছেড়ে দেন ভবন মালিকরা। অনেক মালিক নিজ উদ্যোগে ভেঙে ফেলেন বাড়তি স্থাপনা। এ সময় নগরীতে প্রায় দুই হাজার পার্কিং স্পেস অবমুক্ত হয় বলে রাজউক সূত্র জানায়। অনেকে তাদের মার্কেটের নিচতলায় বা আন্ডারগ্রাউন্ডে বাণিজ্যিক কাজে ভাড়া দেওয়া স্থাপনা ভেঙে ফেলেন। কিন্তু যথাযথ তদারকির অভাবে অধিকাংশ ভবনের পার্কিং স্পেস আবার বাণিজ্যিক কাজে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। সেসব স্থাপনায় ‘পার্কিং’ লেখা সাইন বোর্ডও নামিয়ে ফেলেছেন অনেকেই। কেউ কেউ আগের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণ করেছেন। নগরীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গুলশান, বনানী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানে অবমুক্ত পার্কিং স্পেসগুলোর এই বাণিজ্যিকীকরণ দেখা গেছে। নগরীর এলিফ্যান্ট রোডের কয়েকটি মার্কেটের পার্কিংয়ের জায়গা দোকান করে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। উচ্ছেদ অভিযানে সেসব ভেঙে পার্কিয়ের জায়গা করা হয়। এখন কোথায় পার্কিং, আর কোথায় দোকান আলাদা করা কঠিন। শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড, কলেজগেট, কল্যাণপুরে রাস্তার পাশে যেসব দোকান ভেঙে পার্কিংয়ের জায়গা বের করা হয়েছিল সেগুলো এখন বাসের কাউন্টার হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ পার্কিং পলিসি না থাকায় রাজধানীতে পার্কিং নৈরাজ্য বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে পার্কিং পলিসি তৈরির বিভিন্ন চেষ্টা দীর্ঘদিনেও ফলপ্রসূ হয়নি। ডিসিসি একটি খসড়া পার্কিং পলিসি তৈরি করলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ডও (ডিটিসিবি, বর্তমানে ডিটিসিএ) একটি খসড়া পার্কিং পলিসি তৈরি করেছিল। কিন্তু ২০০৪ সালে বনানী থেকে ডিটিসিবির অফিস নগর ভবনে ‘ছিনতাই’ হওয়ার সময় অন্যসব কাগজের সঙ্গে পার্কিং পলিসিও হারিয়ে যায়। ২০০৪ সালে তৈরি সরকারের ল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট পলিসিতে পার্কিংয়ের কথা আছে মাত্র দুই লাইন। তবে ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) পার্কিং বিষয়টিতে বেশ জোর দেওয়া হয়েছে। রাজউক ’৮৪ সালে তাদের বিধিমালায় পার্কিং সুবিধার কথা উল্লেখ করে। সংশোধিত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৬ এ ভবন নির্মাণে পার্কিং সুবিধা রাখার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হয়েছে। মতিঝিল-দিলকুশা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন থেকে শাপলা চত্বর হয়ে নটর ডেম কলেজ ও দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়ক এবং পুরো দিলকুশা এলাকার প্রতিটি সড়কের দুই দিকে অসংখ্য ছোট-বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি গাড়ি দুই-তিন ঘণ্টা পর্যন্ত রাস্তা দখল করে থাকছে। কোনো কোনো গাড়ি সকালে কর্মকর্তাকে নামিয়ে বিকালে অফিস ছুটি না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায় অপেক্ষায় থাকে। অপ্রশস্ত জায়গা দিয়ে অন্যান্য গাড়ির এলোপাতাড়ি চলাচলের ফলে গোটা বাণিজ্যিক এলাকায় যানজট লেগে থাকছে। দিলকুশায় সাধারণ বীমা টাওয়ারের আশপাশেও অনেক গাড়ি রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে। ডিটিসিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এসটিপি অনুসরণ করলে পার্কিং নিয়ে কোনো সমস্যা থাকবে না। রাস্তায় এত বেশি গাড়ি রাখারও কোনো দরকার হবে না। তবে মানুষের অভ্যাস খুব খারাপ। তারা নিয়ম মানতে চায় না। বাড়ি বানাবেন কিন্তু গাড়ির জায়গা রাখবেন না, তা হয় না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর