কার্বন নিঃসরণ না করলে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে না। সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে। অ্যাডহক ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনহ্যান্সড ডারবান প্লাটফরম (এডিপি) বৈঠক থেকে প্রকাশিত খসড়া দলিলে এমনটাই বলেছে শিল্পোন্নত দেশগুলো। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো বলছে, পার্থক্য থাকতে হবে। তারা এর পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। এদিকে এডিপি সভায় এডিপি চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে যে খসড়া দলিল প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোকে এক করে এখন ৪৮ পৃষ্ঠার একটি দলিল তৈরি করে তা কপ-২১ প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ দলিল নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হবে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে। এ বৈঠক আজ শুরু হচ্ছে। এডিপির চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানের ৪০ পৃষ্ঠার যৌথ দলিলে যেসব বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— একুশ শতক পর্যন্ত বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখার বিষয়ে একমত হওয়া। এ ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে আইএনডিসিতে দেশগুলো যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা আরও বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এডিপির ওই খসড়া দলিলে লিগ্যাল বাইন্ডিং অ্যাগ্রিমেন্ট (এলবিএ)-এর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য এলবিএ’র বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বকে বাঁচাতে হলে একুশ শতক পর্যন্ত বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই রাখতে হবে। আর এ জন্য প্যারিস সম্মেলন থেকেই লিগ্যাল বাইন্ডিং অ্যাগ্রিমেন্ট (এলবিএ) বা আইনগত বাধ্যবাধকতা চুক্তি করতে হবে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই ব্যস্ত সময় পার করেছেন বাংলাদেশের পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। সকালে মন্ত্রীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এবং যুক্তরাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীর সঙ্গে। এতে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ দলের সমন্বয়কারী ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, পরিবেশ ও বন সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম-সচিব নূরুল কাদির। এসব বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য পরিবেশ ও বন সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ দুই দেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সে বিষয়টি তুলে ধরেছি। বলেছি, বাংলাদেশের দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী চার কোটিরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছি, আমাদের একার পক্ষে এ রকম একটি বড় সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এ জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা চাই।’ সচিব জানান, “এর জবাবে দুই দেশের প্রতিনিধিরাই বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশের বিষয়ে আগে থেকেই অবগত আছি’। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা বিশেষ খেয়াল রাখবে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য এলডিসিতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেছে, ‘আমরা জানি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে’।” পরিবেশ ও বন সচিব জানান, দুই দেশেরই বাংলাদেশের প্রতি তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। উপকূলের মানুষ যাতে বাস্তুচ্যুত না হয় সে জন্য তারা সাহায্য বাড়াবে।
এদিকে, প্যারিসে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন যুক্তরাজ্যের জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী লর্ড ব্রউনি। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে যুক্তরাজ্য সব সময় বাংলাদেশকে সমর্থন করে যাবে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য দীর্ঘদিনের বন্ধু উল্লেখ করে ব্রউনি বলেন, প্যারিসে একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা চুক্তি পাস করতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।