মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বদলে যাচ্ছে তেজগাঁওয়ের দৃশ্যপট

অবৈধ রেলওয়ের মার্কেটে মাদক ব্যবসা চলছেই, প্রস্তুত হচ্ছে ট্রাকস্ট্যান্ড

লাকমিনা জেসমিন সোমা

বদলে যাচ্ছে তেজগাঁওয়ের দৃশ্যপট

কারওয়ান বাজার টু সাতরাস্তা সড়কে তৈরি হচ্ছে ডিভাইডার —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাল্টে গেছে রাজধানীর কারওয়ান বাজার টু সাতরাস্তা সড়কের চিত্র। নেই চিরচেনা যানজট, অবৈধ পার্কিং, কিংবা বিশৃঙ্খল ট্রাকস্ট্যান্ড। প্রায় ১০০ ফুট চওড়া ও ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ রাস্তার সবটুকুই এখন ব্যবহূত হচ্ছে জনসাধারণের কল্যাণে। নির্বিঘ্নে চলাচল করছে যানবাহন। তার মধ্যেও থেমে নেই সংস্কার কাজ। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অকেজো ট্রাকস্ট্যান্ডটিও নতুন করে সাজানো হচ্ছে। পাল্টে যাওয়া এই দৃশ্য ও কর্মযজ্ঞ দেখতে ভিড় করছেন লোকজন। তবে রাস্তাসংলগ্ন অবৈধ রেলওয়ে মার্কেটটির বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙেনি মাদকের আখড়া। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

গত রবিবার সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কারওয়ান বাজার  থেকে সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে মিডিয়ান বা আইল্যান্ড তৈরির জন্য কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। এরই মধ্যে সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে কংক্রিটের ব্লক। সংস্কারের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার কামরুজ্জামান জানান, মেয়র আনিসুল হকের নির্দেশে তারা ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই রাস্তাটির সংস্কার কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। রাস্তার আইল্যান্ড তৈরি হয়ে গেলে তার ওপর সৌন্দর্যবর্ধক গাছ লাগানো হবে। সব মিলিয়ে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাস্তাটি দৃষ্টিনন্দন রাস্তায় রূপান্তরিত হবে।

জানা যায়, যুগ যুগ ধরে এই রাস্তাটি ছিল অবৈধ দখলে। ১০০ ফুট প্রশস্ত হলেও রাস্তার দুই পাশে অবৈধ পার্কিং, শত শত দোকানপাট এবং ট্রাক-মিনিট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় পায়ে হেঁটে চলাচলও ছিল দুষ্কর। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা লেগে থাকত যানজট। আর এই অবৈধ পার্কিং ও ট্রাকস্ট্যান্ড ঘিরে চলত নানা অপকর্ম, বাণিজ্য। স্থানীয় থানা পুলিশ ও প্রশাসনকে কব্জায় রেখে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন স্থানীয় মালিক-শ্রমিক নেতারা।

প্রস্তুত হচ্ছে মূল ট্রাকস্ট্যান্ড : রাস্তার উপরে ট্রাক রাখতে রাখতে আসল ট্রাকস্ট্যান্ডটিই মূলত অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। সেখানে নিয়মিত বসত মাদকের আসর। সন্ধ্যা নামতেই ভাসমান ও স্থায়ী মাদকসেবীদের আড্ডায় পুরো এলাকায় সৃষ্টি হতো এক ভয়ানক অবস্থা। বর্তমানে ট্রাকস্ট্যান্ডটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নতুন আঙ্গিকে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। রবিবার সেখানে বুলডোজার দিয়ে মাটি সমানের কাজ করতে দেখা যায়। একই সঙ্গে সেখানে সীমানাপ্রাচীর সংস্কারের কাজও চলছিল।

ভাঙেনি অবৈধ রেলওয়ে মার্কেটের মাদক ব্যবসা : মূল ট্রাকস্ট্যান্ডটির সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু হওয়ায় সেখানে মাদকের আখড়া ভেঙেছে। কিন্তু এর পাশেই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রেলওয়ে মার্কেটটির ব্যাপারে এখনো কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মাদকের ব্যবসা নির্মূল হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, রেলের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে দোকানপাট বানিয়ে ভাড়া দিয়ে রেলওয়ে মার্কেট পরিচালনা করছেন স্থানীয় দুই শ্রমিক নেতা। স্থানীয় থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম এবং বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মকবুল আহমেদ পরিচালিত এই মার্কেটের মধ্যে বেশ কয়েকটি দোকানে এখনো মাদক ব্যবসা চলছে বলে অনেকেই জানান। ২০০৮ সাল থেকে চলে আসা এই মাদক ব্যবসার ব্যাপারে স্থানীয় থানা পুলিশের ‘রহস্যজনক’ উদাসীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। যুগ যুগ ধরে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে তেজগাঁওয়ের এই এলাকাটিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন স্থানীয় শ্রমিক নেতারা। অবৈধভাবে রাস্তার ওপরই গড়ে তুলেছিলেন ছোট ছোট মেরামত কারখানা। এর আগে তাদের বহুবার উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অজানা কারণে তা বার বার ভেস্তে গেছে। সর্বশেষ উত্তর সিটির প্রথম নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক উচ্ছেদের উদ্যোগ নেন। নিজে থেকে সরে যেতে বার বার তাগাদা দিলেও কথা শুনছিলেন না দখলবাজরা। পরে মেয়রের নেতৃত্বে রাস্তার ওপর থাকা প্রায় সাড়ে চারশ দোকানপাট উচ্ছেদ করে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৯ নভেম্বর উচ্ছেদ অভিযানের সময় মেয়রের ওপর চড়াও হন শ্রমিক নেতারা। সংঘর্ষ বাধে পুলিশ-শ্রমিকে। এ সময় সাতটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ডিএনসিসির ক্ষতি হয় অন্তত ১২ কোটি টাকার। ওই দিনই মেয়র আনিসুল হক মালিক-শ্রমিকদের জন্য আধুনিক ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে জনগণের স্বার্থে অবৈধ দখলবাজদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সর্বশেষ খবর