মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৪ হাজার প্রাইভেট কারের দখলে রাস্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৪ হাজার প্রাইভেট কারের দখলে রাস্তা

রাজধানীর দুর্বিষহ যানজটের জন্য শিক্ষাঙ্গনকেন্দ্রিক অবৈধ পার্কিং সমস্যাকেও দায়ী করা হয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রায় ১৪ হাজার প্রাইভেটকার দিনে অন্তত চারবার শিক্ষাঙ্গনে যাওয়া-আসা করে। এর ফলে রাজধানীর সড়কসংলগ্ন স্কুলগুলোর সামনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। স্কুলবাস চালুর মাধ্যমে স্কুলগেটকেন্দ্রিক যানজট কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। এ সম্পর্কিত একটি উদ্যোগ বাস্তবায়নে ২০০৯ সালে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন বোর্ড (ডিটিসিবি) অনেক দূর এগিয়ে গেলেও পরে সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে। দীর্ঘ অর্ধ যুগ পরেও যানজট লাঘবে স্কুলবাস সার্ভিস চালু করা সম্ভব হয়নি।

রাজধানীর যানজট নিরসনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আলাদা বাসে পরিবহনের উদ্যোগ নিয়ে ২০০৯ সালে মাঠে নামে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন বোর্ড (ডিটিসিবি)। এ ব্যাপারে অনেকগুলো বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। তখন স্কুলবাস প্রবর্তনের ব্যাপারে নগরীর উল্লেখযোগ্য স্কুলগুলো ইতিবাচক সাড়া দেয়। তখন বলা হয়, এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে রাজধানীতে  স্কুলগেটকেন্দ্রিক যানজট কমে যাবে এবং স্কুলগেটে প্রাইভেটকারের ভিড় থাকবে না। জানা গেছে, রাজধানীতে স্কলাসটিকা, আগা খান স্কুল, কোডা, সোডা, ইউডাসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগে থেকেই নিজস্ব বাস সার্ভিস চালু করেছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ায় বাস সার্ভিস প্রবর্তন করেছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা প্রাইভেটকারে আসা-যাওয়া করে। সূত্র জানায়, স্কুলবাস সার্ভিস বাস্তবায়ন হলে একটি স্কুলবাসে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী বহন করা যাবে। অথচ এ ৩০ জনকে স্কুলে আনতে-নিতে তাদের প্রাইভেট গাড়ির অন্তত ১২০টি ট্রিপ দিতে হয়। স্কুলবাস সার্ভিস চালুর পর প্রাইভেটকার নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে না। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

রাজধানীর অভিজাত এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ নগরীতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকালে স্কুল শুরুর সময় এবং দুপুর ও বিকালে স্কুল শেষ হওয়ার সময় অভিভাবকদের প্রাইভেট গাড়ির তীব্র ভিড় লেগে যায়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কসংলগ্ন স্কুলের সংখ্যাও কম নয়। এসব স্কুলে একজন শিক্ষার্থী নিয়ে গাড়ি এসে খালি অবস্থায় ফিরে যায়। আবার ছুটির সময় খালি গাড়ি এসে তাকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে যায়। এক শিক্ষার্থীর দুবার যাতায়াতের জন্য একটি গাড়ি চারবার আসা-যাওয়া করে। এ ছাড়া অনেকে স্কুল সময়ের বাইরে কোচিংয়ের জন্যও গাড়ি ব্যবহার করে। সে হিসাবে প্রায় ১৪ হাজার প্রাইভেটকার দিনের বিভিন্ন সময়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাস্তায় চলাচল করে বলে সূত্র জানায়। ফলে দিনের ব্যস্ত সময়ে এসব প্রাইভেট কার যে পরিমাণ রোড স্পেস দখল করে তা থেকে পরিত্রাণের জন্যই স্কুলবাস প্রবর্তনের চিন্তা করছিল ডিটিসিবি। এ স্কুলবাস প্রবর্তন করা গেলে স্কুলগেটে প্রাইভেট গাড়ির দীর্ঘ লাইন বন্ধ হয়ে যাবে।

নগরীর ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরার বিভিন্ন প্রাইভেট স্কুলেই প্রাইভেট গাড়ির এ ভিড় বেশি দেখা যায়। ধানমন্ডির অধিকাংশ ইংরেজিমাধ্যমের স্কুল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুল, ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট, রাজউক, মিরপুর রোডের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজ, মহাখালীর শাহীন স্কুল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, গুলশানের বিআইটি স্কুল, উত্তরার স্কলাসটিকাসহ নগরীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নাম-করা স্কুলগুলোর সামনেই অভিভাবকদের গাড়ির ভিড় হয়। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) একজন কর্মকর্তা বলেন, স্কলাসটিকা উত্তরার গেটে প্রতিদিন অভিভাবকদের অসংখ্য গাড়ির কারণে রাস্তায় জ্যাম লেগে যায়। মিরপুর রোডের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের সামনেও স্কুল শুরু ও শেষের সময় ভিড় হয়। অথচ তাদের স্কুল বেষ্টনীর ভিতরে নয়টি খেলার মাঠ রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে অভিভাবকদের গাড়ির জন্য একটি আলাদা পার্কিং এলাকাও করতে পারে। ডিটিসিবির সাবেক অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, বিশ্বের কোনো দেশেই প্রাইভেট গাড়িতে স্কুলের বাচ্চা আনা-নেওয়ার রেওয়াজ নেই। একটি বাচ্চার জন্য একটি গাড়ি চারবার আসা-যাওয়া করে। এটা সব দিক দিয়েই ক্ষতিকর। আমরা ডিটিসিবি থেকে স্কুলবাস চালু উদ্যোগ নিয়েছিলাম অনেক আগেই। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।

সর্বশেষ খবর