মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নৈতিক স্খলনে শাস্তি হয় না বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের

মাহবুব মমতাজী

যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে মনে করা হয় যোগ্যতার সর্বোচ্চ প্রতীক আর নৈতিকতাতেও উঁচুমানের। ধরা হয় শিক্ষাসহ জাতীয় উন্নয়নে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। জ্ঞানের উত্কর্ষ সাধন হয় তাদের হাত ধরেই। তবে কিছুসংখ্যক শিক্ষকের ছাত্রীর যৌন হয়রানি, দায়িত্বে অবহেলা, অর্থলিপ্সা ও অতিমাত্রায় রাজনৈতিক সংস্পর্শতার কারণে শিক্ষকদের যেমন দুর্নাম কুড়াতে হচ্ছে তেমনি দিন দিন ঘটছে নৈতিকতার অবক্ষয় এবং স্খলন। এসব ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক জড়িত থাকলেও তাদের কারও কারও শাস্তি হয়। আবার কারও কারও শাস্তি হয় না। ব্যক্তিগত সম্পর্ক, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবে পার পেয়ে যান বেশির ভাগই। কেউ কেউ পড়ে যান ক্ষোভের জাঁতাকলে। আর অল্প কিছু শিক্ষকের জন্য নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।

জানা গেছে, ২০১১ সালের ১২ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক জহির উদ্দিন আরিফ। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনৈতিক প্রস্তাবসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধনও করেছেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিলেও কিছুই হয়নি জহির উদ্দিন আরিফের। চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল একই ধরনের ঘটনা ঘটান অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮তম সিন্ডিকেট সভায় ওই শিক্ষককে পদাবনতি দিয়ে এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আলী নূরের বিরুদ্ধে নতুন বিল্ডিংয়ে এসি লাগাতে ৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীদেরও অভিযোগ, ইভিনিং এমবিএ’র কারণে নিয়মিত ব্যাচের ক্লাসও ঠিকমতো নেন না তিনি। ২০১২ সালে বাংলা বিভাগের এক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেন একই বিভাগের শিক্ষক সেলিম মোজহার। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো শাস্তি হয়নি ওই শিক্ষকের। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ২০১২ সালে শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নে নিজ বিভাগের এক সহকর্মীর স্বাক্ষর জাল করে টাকা তুলে আত্মসাত্ করেন তিনি। এ নিয়ে ওই সহকর্মীর অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও ড. আতিয়ারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এ ছাড়াও ৯ অক্টোবর ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাশের কক্ষে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে উত্তর বলে দেওয়ার অভিযোগে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মেজবাহ উল আজম সওদাগরকে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক বানিয়ে ৩ ডিসেম্বর পদাবনতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

আরও অভিযোগ রয়েছে, অর্থ আত্মসাতের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের পাশাপাশি কর্মকর্তারাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের তার কেনা বাবদ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দাম ধরে অর্থ আত্মসাত্ করেন প্রকিউরমেন্ট অফিসার হিমাদ্রি শেখর মণ্ডল। ঘটনাটি ধরা পড়লে তাকে শোকজ করা হয়। পরে তাকে কোনো শাস্তি না দিয়েই মাফ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও স্টকে কাগজ সংরক্ষণ না করে পরীক্ষার খাতার সংকট দেখিয়ে অন্তত পাঁচটি বিভাগের পরীক্ষা আটকে রেখেছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আক্তারুজ্জামান।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি যোগদান করার পর থেকে সাধারণ নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন এবং নৈতিক স্খলনের যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলোর ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং যেগুলো শাস্তিযোগ্য সেগুলোর বিষয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়াটা কতটা নৈতিক— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প কিছুসংখ্যক শিক্ষক ক্লাস নেন। সবাই নেন না। উপাচার্য আরও বলেন, প্রায় একশ’র মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলোয় অভিজ্ঞ ও মানসম্মত শিক্ষক আছে কিনা তা তদারক করা হয় না। আর ভালো ভালো সাবজেক্টে পড়ানোর জন্য ওই মানের শিক্ষক না থাকায় পাবলিকের শিক্ষকরা সান্ধ্যকালীন ক্লাস নেন। তা ছাড়া তারা যথাযথ অনুমোদনের মাধ্যমেই তা করেন।

সর্বশেষ খবর