মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

‘রোগাক্রান্ত’ মাগুরা সদর হাসপাতাল নিজেই মুমূর্ষু

রাশেদ খান, মাগুরা

‘রোগাক্রান্ত’ মাগুরা সদর হাসপাতাল নিজেই মুমূর্ষু

মানুষের বাঁচার জন্য শেষ আশ্রয়স্থল হাসপাতাল। কিন্তু সেই হাসপাতাল নিজেই যখন বহুমুখী সমস্যা বা রোগবালাইয়ে মুমূর্ষু থাকে— তখন মানুষের স্বাস্থ্যসেবার বদলে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাই জরুরি হয়ে উঠে। ঠিক এমন অবস্থায়ই রয়েছে মাগুরা সদর হাসপাতালে। জনবল সংকট তো আছেই, বাকি যা আছে তার ভিতর বাসা বেঁধেছে দুর্নীতি আর অনিয়ম। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রবেশ দ্বারেই দালালদের ছড়াছড়ি। নোংরা আবর্জনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই না থাকা এবং দেখভালের অভাবে হাসপাতালজুড়ে দুর্গন্ধ। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় সারা বছরই হাসপাতালের ভিতর পানি জমে থাকে। বিশেষ করে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দুই পাশের অবস্থা ভয়াবহ। নার্সিং ইনস্টিটিউটের মধ্যেও সারা বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। হাসপাতালের ভিতরে কোনো কেবিন অথবা সাধারণ ওয়ার্ডের সঙ্গে টয়লেট ব্যবস্থা নেই। ৪/৫ বছর আগে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ঘোষণা করা হলেও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ঘোষণার বাস্তবায়ন হয়নি। সে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এত দিনে। রোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিটি প্যাথলজি সেন্টারের ডাক্তার থেকে পিয়ন পর্যন্ত ব্যস্ত কমিশন বাণিজ্যে। তাই ডাক্তাররা কারণে-অকারণে বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে তাদের পছন্দমতো প্যাথলজি সেন্টারে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অত্যাধুনিক আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও ৫০০ এম এ-এর এক্স-রে থাকলেও হাসপাতাল থেকে কখনো পরীক্ষার কাজ করা হয় না। ডাক্তারদের অধিকাংশই নামে বেনামে বিভিন্ন ক্লিনিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যে কারণে কোনো সিজারিয়ান রোগী বা অপারেশনের রোগীকে হাসপাতালের নানা সমস্যার কথা জানিয়ে ডাক্তার কিংবা নার্সরা তাদের পছন্দমতো ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। মাগুরা ক্লিনিক অ্যাসোসিয়েশন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন বলেন, ‘মাগুরা সদর হাসপাতালের ডাক্তারদের অনেকেই মাদকে আসক্ত। তাই রোগীদের চিকিত্সা দেওয়ার আগে তাদেরই চিকিত্সা দেওয়া উচিত। ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিজিট করতে করতেই ডাক্তারদের অর্ধেক সময় চলে যায়। তার ওপর আছে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও প্যাথলজির দালালদের অবাধ বিচরণ। এ ছাড়া এ হাসপাতালে চলে জমজমাট শ্লিপ বাণিজ্য। ভর্তি রোগীদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওয়ার্ডের নার্সরা বাইরে থেকে ওষুধ কেনার জন্য শ্লিপ লেখে দেন। কিন্তু এসব ওষুধের মধ্যে অনেক ওষুধই হাসপাতালে থাকার কথা। তা রোগীদের দেওয়া হয় না, কিন্তু রেজিস্ট্রারে ঠিকই দেখানো হয় যে রোগীকে ওষুধগুলো দেওয়া হয়েছে।’ এসব সমস্যার বিষয়ে হাসপাতালের আর এম ও ডা. মুক্তাদুর রহমান বলেন, ‘জলাবদ্ধতার ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ে অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। দালালরা স্থানীয় হওয়ায় তারা শক্তিশালী। অনেকবার পুলিশের সাহায্য নিয়ে কোনো সুফল পাইনি। দু-এক দিন এদের তত্পরতা কম থাকলেও তারপর আগের মতোই তাদের কর্মকাণ্ড চলে।’ তিনি দাবি করেন, ‘ডাক্তাররা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের ডিউটি করেন। হাসপাতালের সাপ্লায়ের মধ্যে সব প্রকার ওষুধ থাকে না, যার ফলে অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে রোগীদের কিনে নিতে হয়। তবে আশা করি, ২৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হলে সমস্যাগুলো আর থাকবে না।’

সর্বশেষ খবর