মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

বুকিত বিনতাং যেন আরেক ঢাকা

শামছুল হক রাসেল, কুয়ালালামপুর থেকে

বুকিত বিনতাংয়ের অলি-গলিতে হাঁটতে গেলে কানের সামনে উচ্চারিত হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা। কখনো শোনা যায় নোয়াখালী, কখনো বরিশাল, আবার কখনো উত্তরবঙ্গের কোনো অঞ্চলের।

এক কথায় বলতে গেলে এখানে ছোটখাটো একটি মিলন মেলা বা সম্মিলন ঘটে এখানকার বাঙালি প্রবাসীদের। এদের বেশির ভাগই কর্মজীবী, নয়তো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। শুধু বাঙালি বললে ভুল হবে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের কলকাকলিতেও মুখরিত থাকে এ এলাকা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মনেই হয় না এটি দূর পরবাসের কোনো জায়গা। কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনে হয় এটি ঢাকার বেইলি রোড কিংবা গুলশানের কোনো এলাকা। পর্যটক হিসেবে যারাই কুয়ালালামপুরে আসেন তাদের প্রথম পছন্দ থাকে এই বুকিত বিনতাং। এ যেন কুয়ালালামপুরের প্রাণভোমরা। বড়দিনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে সাজানো শুরু হয়েছে এখানকার অলি-গলি। কুয়ালালামপুরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার পর্যটকদের কাছে প্রথম পছন্দ থাকে এ এলাকাটি। বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সিযোগে ভাড়া লাগে ৮০ থেকে ১০০ রিঙ্গিত। এ ছাড়া বাসে আসতে চাইলে ১০ রিঙ্গিত। এ এলাকায় পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু হোটেল ও মোটেল। এক কথায় বলতে গেলে, কুয়ালালামপুরের অন্যতম ট্যুরিস্ট এরিয়া হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বুকিত বিনতাংয়ের। সন্ধ্যার পর এখানে বাঙালিদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। কথা হলো নোয়াখালীর সোহাগের সঙ্গে। তিনি জানালেন, যে কোনো ছুটি বা উত্সবে এ অঞ্চলে বাঙালিদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এখানে সবাই ছুটে আসেন দেশের মানুষের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কিছু কথা ভাগাভাগি করে নিতে। একই কথা জানালেন বরিশালের জীবন এবং জামান। এ ছাড়া কথা হলো মোবাইল সিম বিক্রেতা চাঁদপুরের জাফরের সঙ্গে। তিনিও জানালেন বুকিত বিনতাংয়ে বাঙালিদের সরব উপস্থিতির কথা। মালয়েশিয়ায় দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই বললেই চলে। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে সাজানো হয়েছে গোটা দেশ। আর রাজধানী হওয়ায় কুয়ালালামপুর যেন একটু বেশি ছোঁয়া পেয়েছে। এ ছাড়া এখানকার আবহাওয়াও পর্যটনবান্ধব। এটাও ঠিক যে, সপ্তাহে বেশির ভাগ দিনই কমবেশি বৃষ্টির ছোঁয়া লাগে এখানে। এরই মাঝে পর্যটকরা ছুটে বেড়ান পেট্রনাস টুইন টাওয়ার, সুলতানস প্যালেস, কোকো মিউজিয়াম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্ক, বাতুগুহা, জু-নিগাড়া, চায়না টাউন, শ্রী মাহা মারিয়াম্মান মন্দির ইত্যাদি। কুয়ালালামপুর এলে টুইন টাওয়ার না দেখলে সফরটাই যেন বৃথা মনে হয় পর্যটকদের। সন্ধ্যার পর এই বিশাল বিল্ডিংয়ের অবয়ব আরও বেশি আকর্ষণীয়। কারণ এ সময় যোগ হয় আলোকসজ্জা। এদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সুন্দর জায়গা হলো বাতুগুহা। প্রায় ১৫০ ফুট উঁচু সিঁড়ি বেয়ে গুহায় প্রবেশ করতে হয়। অন্যদিকে চায়না টাউনের কথা না বললেই নয়। এখানকার সবচেয়ে কমমূল্যে পণ্য কেনার মার্কেট এটি। বিদেশিরাই মূলত এখানকার ক্রেতা। সিঙ্গাপুরের চায়না টাউন ও কুয়ালালামপুরের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। শহরের বাইরে আছে পুত্রাজায়া, গ্যানতিং হাইল্যান্ড। আরও দূরে আছে লাংকাউই, পেনাং, যহরবারু। এগুলো মালয়েশিয়াতে ভ্রমণের জন্য অন্যতম স্থান। সবচেয়ে বড় কথা, পর্যটন শিল্পকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে একটি দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে তা মালয়েশিয়াকে দেখলেই বোঝা যায়। অন্যদিকে চিকিত্সার জন্য ভ্রমণ সরকারিভাবে উত্সাহিত করা হয় এমন অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া একটি। এ কারণে চিকিত্সা নিতে আসা রোগীরা দেশটির প্রচলিত আইনে যথেষ্টই সুরক্ষা পান। চিকিত্সাসেবার মান নিয়েও উদ্বেগ নেই। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা চিকিত্সকরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে চিকিত্সা দেন। এ ছাড়া চমত্কার স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া দেশটিকে দিয়েছে হেলথ ট্যুরিজমের আবহ ।

সর্বশেষ খবর